Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

সাফ চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে এএফসিতে স্বপ্নহীন মারুফুল

bff1
[publishpress_authors_box]

বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সেদিনের মতো বুধবারও কোচের চেয়ারে বসে ছিলেন মারুফুল হক। গত আগস্ট মাসে নেপাল যাওয়ার আগে বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরতে চাই। ঠিকই অনূর্ধ্ব-২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।

এবার সেই দল নিয়েই বুধবার রাতে ভিয়েতনাম যাচ্ছেন মারুফুল হক। এবার বাংলাদেশ খেলবে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী গুয়াম, ভুটান, সিরিয়া ও ভিয়েতনাম। টুর্নামেন্টের ১০ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও ৬টি সেরা রানার্স আপ দল খেলবে চূড়ান্ত পর্বে। ৪৫ দেশের টুর্নামেন্টে যদিও বাংলাদেশের জন্য কাজটা তুলনামূলক কঠিন ছিল না। তারপরও কোচ মারুফুল হক, এই দল নিয়ে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি।

চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলার নেই

সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-২০ সাফের চ্যাম্পিয়ন দল থেকে চোটের কারণে বাদ পড়েছেন গোলরক্ষকে মেহেদি হাসান শ্রাবণ, ফরোয়ার্ড রাব্বি হোসেন রাহুল, মিডফিল্ডার চন্দন রায় ও রুস্তম ইসলাম দুখু মিয়া। বসুন্ধরা কিংস থেকে গোলরক্ষক আসিফ হোসেন ও মোহাম্মদ মহসিন ক্যাম্পে যোগ দিলেও ফিটনেস নেই বলে তাদের বাদ দিয়েছেন কোচ।

অথচ আসিফ সাফের সেমিফাইনালে চোটগ্রস্ত শ্রাবণের বদলি হিসেবে নেমে টাইব্রেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। সাফের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতেন ফাইনালে দারুণ খেলে। এর বাইরে বসুন্ধরা কিংস থেকে মজিবর রহমান জনি ও রিমন হোসেনকে চেয়েও পাননি কোচ। সব মিলিয়েই এশিয়ান কাপ বাছাই নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না উয়েফা প্রো-লাইসেন্সধারী এই কোচ।

দিনের প্রস্তুতিতে ভিয়েতনাম যাত্রা 

অল্প প্রস্তুতিতে এশিয়ান পর্যায়ে ভালো করা সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ উগরে দেন মারুফুল, “আমি পুরো দল এক সঙ্গে পেয়েছি মাত্র তিন দিন আগে-১৫, ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর। এটা ফুটবল। ক্রিকেট নয়। ব্যক্তিগত কোনও খেলাও নয় যে সবাই এসে ম্যাচের আগে যোগ দেবে আর খেলে ফেলবে। ফুটবলে একটা কম্বিনেশনের প্রয়োজন আছে। এ জন্য ৭ দিনও যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে এমন একটা বয়সভিত্তিক দলের ক্ষেত্রে।”

সাফ অঞ্চলের চেয়ে এএফসিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি। কিন্তু প্রস্তুতি হয়েছে কম। সেই আক্ষেপ কোচের কন্ঠে, “আমরা গত সাফে শিরোপা জিতেছি, তখন ১৫ দিন সময় পেয়েছিলাম। সেখানে খেলোয়াড়েরা প্রচুর অমানুষিক পরিশ্রম করে। তাদের মনোযোগও ছিল। এজন্য আমরা ১৫ দিনে সফল হতে পেরেছি। কিন্তু এই টুর্নামেন্ট আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এখানকার লেভেলটা দেখতে হবে। আমরা আগে ছিলাম সাফ অঞ্চলে, এখন এশিয়ান লেভেলে যাচ্ছি। সেখানে তাদের প্রস্তুতির জন্য যতটুকু সময় দেওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু আমরা দিই নি।”

১৮ ঘন্টার ভ্রমণক্লান্তি নিয়ে খেলতে নামবে

২১ সেপ্টেম্বর সিরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ। অথচ বুধবার রাতে ভিয়েতনামের বিমানে উঠে স্থানীয় সময় পরদিন দুপুর দুইটায় টিম হোটেলে উঠবে বাংলাদেশ যুব দল। প্রায় ১৮ ঘন্টার টানা ভ্রমণক্লান্তি শেষে বাংলাদেশ ম্যাচের আগে মাত্র ১ দিন অনুশীলন পাবে। এসব নিয়েও ক্ষোভ ঝরল কোচের কন্ঠে, “প্রতিটা টিমের একটা গুরুত্বপূর্ণ সেশন থাকে ডে বিফোর ওয়ানডে। সেই দিন আমরা ট্রেনিং করতে পারব না। হয়তো ম্যাচের আগের দিন ১ ঘণ্টা ট্রেনিং করব। এসব কিছু মিলিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা হওয়ার দরকার ছিল, আমি সেটা করতে পারিনি।”

ফিফা প্রীতি ম্যাচ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাফুফের কাছে

কোচ চেয়েছিলেন নেপাল থেকে ফিরেই এএফসি এশিয়ান কাপে নজর দিতে। যেখানে ভুটানের জাতীয় দলে খেলা ৪ ফুটবলার বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেই থাইল্যান্ডে চলে যান কন্ডিশনিং ক্যাম্পে যোগ দিতে। সেখানে ভুটান অনূর্ধ্ব-২০ দল খেলেছে আরও দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। কিন্তু বাংলাদেশ দলের এই টুর্নামেন্ট নিয়ে যেন কোনও পরিকল্পনায় নেই। তবে কি এই দায় বাফুফের।

অসহায়ের সুরে মারুফুল বলেন, “আমি আসলে বোঝাতে পারিনি এই টুর্নামেন্ট আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি হয়তো কাউকে বোঝাতে পারিনি, সেটা আমার ব্যর্থতা। না হলে আমি নেপাল থেকে আসার পর যদি পুরো দল নিয়ে নিবিড় অনুশীলন চালাতে পারতাম, তাদের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে পারতাম, তাহলে কথা দিতে পারতাম, বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করবে।”

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ধারণা ভালো বলেই এক সময় আশাবাদী ছিলেন কোচ, “আমি ভিয়েতনাম, সিরিয়া, এদের খেলা দেখেছি, ভুটানের খেলাও খুব কাছ থেকে দেখেছি। গুয়াম আমাদের চেয়ে একটু দুর্বল। আমরা প্রধান প্রতিপক্ষ ভেবেছিলাম সিরিয়া ও ভিয়েতমামকে। তাদের খেলা দেখেছি। তারা নাগালের মধ্যে ছিল। তাদের কাছ থেকে ৩ পয়েন্ট বা ১ পয়েন্ট পাওয়া, এই দলটার জন্য কোনও সমস্যাই ছিল না।”

বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে মন্তব্য নেই

সম্প্রতি বসুন্ধরা কিংস এই দলের জন্য ফুটবলার না ছাড়ায় যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে কোচের সঙ্গে সে সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি, “ আমি প্রেস রিলিজটা দেওয়ার পর থেকে এই দল নিয়েই মনোযোগী। টুর্নামেন্ট নিয়ে মনোযোগী। আমি ওইটা পুরোপুরি ভুলে যেতে চাই এবং ভুলে গিয়েছি। এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”

ক্লাব পাড়ায় গুঞ্জন বসুন্ধরা কিংসের কোচ হতে না পেরে মারুফুল ক্লাবটির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মারুফুল হক ২০০৮ থেকে কোচিং করাচ্ছে। ৪, ৫, ৬টা টপ ক্লাবে কোচিং করিয়েছে। জাতীয় দলে কোচিং করিয়েছে। বয়সভিত্তিক দলে কোচিং করিয়েছে। অনূর্ধ্ব–২৩ ও অনূর্ধ্ব–২০ দলেও কোচ। বাংলাদেশের কোনও ক্লাব বা জাতীয় দলের কোনও কর্মকর্তা কি বলতে পারবে, কোনোভাবে, কোনো দিন মারুফুল হক তাদেরকে বলেছে, তাদের দলে কোচ হতে চায়।”

শেষ মুর্হর্তে দায়সারা ভাবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দল পাঠানোর সংস্কৃতি থেকে সরে আসা উচিত বলেই মনে করেন মারুফুল, “আমাদের ফুটবল সিস্টেম, সংস্কৃতি না বদলালে এসব বদলাবে না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত