দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন জারির পর পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধিতার মুখে কয়েক ঘণ্টা পরই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল।
বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল ‘মার্শাল ল’ জারির পর দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন এবং দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তারা জাতীয় পরিষদে উপস্থিত হয়ে এই পদক্ষেপ আটকাতে ভোট দেন।
একই সময়ে প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে পার্লামেন্ট বাইরে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। এ সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়।
এমন পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট সদস্য মার্শাল ল জারির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভোট দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল বলেন, সামরিক আইনের অবসান ঘটাতে পার্লামেন্টের অবস্থান তিনি মেনে নেবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ আইন প্রত্যাহার করা হবে বলে ঘোষণাও দেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা জাতীয় পরিষদের অনুরোধ মেনে নেব এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকের মাধ্যমে সামরিক আইন তুলে নেব।”
বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানায়, পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের আদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল আকস্মিকভাবে এক টেলিভিশন ভাষণে দেশে ‘মার্শাল ল’ জারির ঘোষণা দেন।
দেশটির পিপল পাওয়ার পার্টির নেতা উন সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে ২০২২ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়ে-মিউং থেকে মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
সামরিক আইন জারির পক্ষে উন যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, বিরোধীদের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, বিদ্রোহে উসকানি এবং পার্লামেন্টকে অপরাধীদের আখড়া বানানোর চক্রান্ত ঠেকাতে তাকে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
ভাষণে তিনি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শাসকদের হুমকি থেকে উদার দক্ষিণ কোরীয়দের রক্ষা, রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত নস্যাতে আমি সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিচ্ছি।”
“জনগণের জীবন-জীবিকার প্রতি দায়িত্বশীলতা না দেখিয়ে বিরোধী দল সরকারকে অচল করে দিতে চাইছিল,” বলেন প্রেসিডেন্ট।
কোনও দেশে মার্শাল ল’ জারির অর্থ হলো– সেই দেশটির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হবে সামরিক বাহিনী। মার্শাল ল’ জারি হলে সামরিক প্রশাসনের ওপর সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব চলে। নাগরিক অধিকার থাকে সঙ্কুচিত।
দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে বিরোধীরা যখন পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তুলতে যাচ্ছিল, তার আগেই মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তার স্ত্রীর দুর্নীতির তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছিল বিরোধী দল।
মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারির পরপরই তার এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়ে-মিউং। তিনি প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, মার্শাল ল’ জারির পর রাজধানী সিউলে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদ ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নেন হাজারো বিক্ষোভকারী।
একপর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য সেনাসদস্যরা পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন। তখন ভবনের ওপরে হেলিকপ্টারও নামতে দেখা যায়।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হন দেশটির ১৯০ জন আইনপ্রণেতা। তারা প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে ভোট দেন। আর এতেই আটকে যায় প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল’ জারির চেষ্টা।
প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান
মার্শাল ল’ জারির ঘটনা ঘিরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েলকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধদল প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, অন্যথায় তাকে অভিশংসনের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল প্রকাশ্যেই বিরোধীদের দাবির জবাব দিয়েছেন। তবে তার কার্যালয় বলেছে যে প্রেসিডেন্ট উনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও সচিবরা সম্মিলিতভাবে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট তার বুধবার সকালের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও স্থগিত করেছেন।