Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

অনেক প্রশ্ন পেছনে রেখে সামনে মরিয়ম

মরিয়ম নওয়াজ শুক্রবার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসাবে শপথ নেন।
মরিয়ম নওয়াজ শুক্রবার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসাবে শপথ নেন।
[publishpress_authors_box]

পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কে?  এই প্রশ্নের উত্তরে এখন মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ শরিফের নামই আসবে। মুসলিম লিগ-নওয়াজের ভবিষ্যৎ নেতা যে তিনি, তা ধরেই নেওয়া যায়।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন চেনা মুখ মরিয়ম। দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ডনের ভাষায়, তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ আর জনসমুদ্রে দোলা লাগানোর ক্ষমতা দিয়ে মরিয়ম পাকিস্তানের পুরুষ আধিপত্যের রাজনীতিতে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের ষোড়শ জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মরিয়ম দেশটির সবচেয়ে সমৃদ্ধ, জনবহুল ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব প্রদেশের একটি আসন থেকে বিজয়ী হন। শুধু তাই নয়, লাহোরের একটি আসন থেকেও জাতীয় পরিষদের নির্বাচনেও বিজয়ী হন নওয়াজকন্যা।

পাঞ্জাব রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি। আর তাহলে তিনিই হবেন দেশটির প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী।

এখন প্রচারের সামনের সারিতে এলেও মরিয়মের অতীত যেমন কিছুটা রহস্যে ঢাকা, তেমনি রয়েছে নানা সমালোচনা।

২০১৩ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে বাবা নওয়াজের প্রচারের জন্যই ২০১২ সালে রাজনীতির মাঠে পা রাখেন মরিয়ম। সেই নির্বাচনে কাজ করে অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যান তিনি। নির্বাচনে বিজয়ের পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর ইয়ুথ প্রোগ্রামের চেয়ারপারসন নিয়োগ দেওয়া হয়।

কিন্তু সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কারণ তার নিয়োগ নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। শুধু তাই নয়, তার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি নিয়ে সে সময় লাহোর হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জও করা হয়।

মরিয়মের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও। লন্ডনে কয়েকটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে সহায়তার মামলায় ২০১৮ সালে মরিয়মকে দোষী সাব্যস্ত করে পাকিস্তানের একটি আদালত। সাত বছরের কারাদণ্ড হয় তার। তবে ২০২২ সালের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি।

গত বছর ফাঁস হওয়া এক অডিওটেপ নিয়েও সমালোচনায় পড়েন মরিয়ম। সেখানে পিটিআই নেতা আলী বিলাল হত্যাকাণ্ডকে গাড়ি দুর্ঘটনা হিসাবে দেখাতে চাচা শেহবাজ শরিফের সঙ্গে মরিয়মকে আলোচনা করতে শোনা যায়।

নওয়াজ ও কুলসুম নওয়াজের ঘরে ১৯৭৪ সালে জন্ম মরিয়মের। অন্য দুই ভাই ও এক বোনকে ছাপিয়ে মরিয়মই এখন বাবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার।

কিন্তু রাজনীতিতে আসার আগে তার জীবন নিয়ে খুব একটা তথ্য পাওয়া যায় না।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবারগুলোর মধ্যে খুবই আলোচিত ভুট্টো পরিবার ও শরিফ পরিবার। শরিফ পরিবার বরাবরই পারিবারিক বিষয়গুলো গোপন রাখতে পছন্দ করে। তাই এই পরিবারে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিদের শৈশবকাল সম্পর্কেও তেমন কিছু জানা যায় না। শরিফ পরিবারের জন্য এসব খবর প্রকাশ করা পরিবারের কঠোর গোপনীয়তার নীতি ভেঙে দেওয়ার সামিল; যদিও ভাই-বোনদের তুলনায় কিছুটা পরিচিত ছিলেন মরিয়ম।

তাই যেন তথ্য প্রকাশের দায়িত্ব পড়ে পানামা পেপার্সের হাতেই। পানামার মোস্যাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নথিপত্র পর্দার আড়ালে থাকা শরিফ পরিবারের রহস্য সামনে নিয়ে আসে।

পানামা পেপার্সেই প্রথম ওঠে আসে কীভাবে এই দেশটির সুবিধাভোগীরা কোনও কিছু পাওয়ার জন্য তাদের অবস্থানকে ব্যবহার করে। আর সেটা ঘটে মরিয়মের চিকিৎসক হওয়ার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও। মরিয়মকে নেতিবাচক পরিচিতি এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে এ ঘটনা।

তবে মূল অভিযোগের আঙুল তার অভিভাবকদের দিকেই ছিল। কারণ তারাই ওই সময়ে তাদের অবস্থান ব্যবহার করেছিল মরিয়মকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে।

পানামা পেপার্সে ওঠে আসে, লাহোরের সবচেয়ে প্রত্যাশিত ও আকাঙ্ক্ষিত কিং এডওয়ার্ড মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে কিছুটা চালাকির আশ্রয় নেয় শরিফ পরিবার। প্রথমে মরিয়মকে লাহোর থেকে দূরে অবস্থিত এক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়।

তবে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে মরিয়মের চিকিৎসক হওয়ার পথচলা শেষ হয়। ১৯ বছর বয়সে মরিয়মের বিয়ে হয় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা সফদার আওয়ানের সঙ্গে। সফদার পরে শ্বশুর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের নিরাপত্তার দায়িত্বও সামলেছেন।

মরিয়ম ও সফদারের এক ছেলে, দুই মেয়ে। ২০১৫ সালে মরিয়মের এক মেয়ের বিয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যোগ দেওয়ার ঘটনা ছিল বেশ আলোচিত।    

বাবা নওয়াজ শরিফের ছবি হাতে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে মরিয়ম নওয়াজ।

মরিয়ম সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি দেশে কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং বিদেশে আফ্রিকার সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবের ভক্ত, এমনটাও শোনা যায়।

২০১২ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি নেন বলেও প্রচার রয়েছে। তবে তার অন্যসব ডিগ্রির পাশাপাশি তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর নওয়াজ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে মরিয়মকেও কিছুদিন গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল, পরে ছাড়তে হয়েছিল দেশ।

২০১৩ সালে নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার পর মরিয়ম এক টুইটে বলেছিলেন, তিনি কেবল বাবার সাইবার সেলের দেখাশোনা করছেন। কোনও পদপদবি নেওয়ার কিংবা ভোটে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছা তার নেই।

তবে এক দশক বাদে শুক্রবার ভোটে দাঁড়িয়ে জেতার পর পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি, এখন অপেক্ষা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পথচলার।   

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত