বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়ে উঠেছিলেন পুরো বাংলাদেশের অধিনায়ক। সব মানুষের কাছেই তিনি সমাদৃত “ক্যাপ্টেন মাশরাফি” নামে। বিশাল ভক্তকুলের কাছে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের অবস্থান এখন অবশ্য আগের মতো নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে না থাকায় আওয়ামীলীগের এই সংসদ সদস্যের প্রতি ভালোবাসা কমেছে তরুণ ভক্তদের।
কোটা সংস্কার থেকে ঘটনাপ্রবাহ গড়িয়ে সরকার পতন পর্যন্ত হয়েছে। এই সময়ে সংসদ সদস্য পদও হারিয়েছেন মাশরাফি। এতদিন আর সব আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো চুপই ছিলেন। তবে বুধবার ক্রীড়া বিষয়ক পেজ ‘নটআউট নোমান’-এ মুখ খুলেছেন মাশরাফি। জানিয়েছেন ক্রিকেট দলে অধিনায়ক হলেও তিনি আওয়ামী লীগের অধিনায়ক নন। তাই অনেক কিছুতে ইচ্ছা থাকলেও এগিয়ে আসা হয়নি।
মাশরাফি কোন রাখঢাক না করেই বলেছেন, “এক কথায় উত্তর দিলে বলবো আমি ব্যর্থ হয়েছি।মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।নিজের ওপর সেই হতাশা সবসময়ই থাকবে।”
জন-মানুষের নেতা হয়েও কেন তিনি মানুষের পাশে থাকতে পারেননি? জবাবে তিনি বলেছেন, “ কোটা সংস্কারের বিষয়টা আমার কাছেও যৌক্তিক মনে হচ্ছিল। কিন্তু এরপরে যে ঘটনাগুলো হয়েছে…তখন এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে আমার মনে হয়েছে এখন যদি আমি কিছু লিখি সেটা নিয়ে যদি আরও বড় কিছু হয়, তখন সেই জিনিসটা সামাল দেওয়া সম্ভব কিনা। আমি চেষ্টা করিনি যে, তা নয়।”
মাশরাফি চেয়েছিলেন ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, “আমি শুধু একটা স্ট্যাটাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু ওই যে বললাম কোন পদক্ষেপের কারণে জিনিসটা আরও বড় কিছু হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পারিনি।”
তাই ইচ্ছা থাকলেও দেশের ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে পারেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। ওই পরিস্থিতিতে চাইলেও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে জানিয়েছেন, “আমি যখন মাঠে অধিনায়ক (ক্রিকেট দলের) ছিলাম তখন ভালো বা খারাপ যেটাই হোক দায়বদ্ধতা কাঁধে নিতে হয়েছে। কিন্তু এটা তো রাজনীতির বিষয়। দ্বিতীয় হলো এটা জাতীয় বিষয় হয়ে গিয়েছিল। আবার আমি আমার দলের (আওয়ামী লীগ) অধিনায়কও না, সহ-অধিনায়কও না। আমি এই মাত্র রাজনীতি শুরু করেছি।”
মাশরাফি যোগ করেন, “হয় আমাকে উপদেষ্টামন্ডলীতে থাকতে হবে বা ওই রকম একটা দায়িত্ব পেতে হবে যে কথা বলব। সেরকম দায়িত্ব না পেলে তো আমার ওই সুযোগটা থাকে না। দেখা গেল আমি গেলাম, কিছু বলবো, সেখান থেকে বড় কোন ঘটনা ঘটে গেল। তখন! সবকিছু মিলিয়ে আমি যে চেষ্টা করিনি তা না, হয়তোবা আমি পারিনি, সেই সুযোগটা আসেনি। এখন আমি কাউকে দোষ দিব না। খেলোয়াড় হিসেবে আমি ব্যর্থ হয়েছি, এটা আমি মেনে নিচ্ছি।”
দলের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছু করতে হলে মাশরাফিকে আগে পদত্যাগ করতে হতো। তা করলে এখন বাহবা পেতেন মাশরাফি। কিন্তু নড়াইলের মানুষের কথা চিন্তা করে সেই পথেও হাঁটতে পারেননি। কারণ নড়াইল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা মাশরাফির জন্য ওই সময় পদত্যাগ করলে এবং পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে বিশাল জবাবদিহিতার প্রশ্ন থাকতো বলে জানিয়েছেন মাশরাফি।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দিন সন্ধ্যায় সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেটারের নড়াইলের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যা খুবই ব্যাথিত করেছে মাশরাফিকে। ওই বাড়ি মায়ের জন্য বানিয়েছিলেন তিনি। সেই বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের হয়ে আসতে হয় মাশরাফির মা’কে।
সেদিন আগুন দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে মাশরাফি বলেছেন, “আমাদের বাড়িতে কিছু ছেলে-মেয়ে থাকে। ওরা এতিম। ওরাই দেখেছিল দুই ধাপে হামলাকারীরা আক্রমণ করে। শেষে সন্ধ্যার দিকে কিছু মানুষের এগিয়ে আসা দেখে ওরা পরিস্থিতি খারাপ মনে করে। বাবা-মাকে বলেছে বাইরে চলে যেতে। আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিট আগেও মা বাড়িতে ছিলেন, শেষে এক কাপড়ে মাকে বের হয়ে আসতে হয়।”
সবশেষে মাশরাফি আক্ষেপ করে নিজের হতাশা প্রকাশ করেছেন, “আমি আমার আসনে ভিন্ন মতের কোন লোককে দমন করিনি, আটকাইনি। কাজেই লোকদের ক্ষোভ থাকার কথা নয়। তবে লোকরা যেভাবে চেয়েছে সেই প্রত্যাশা হয়তো পূরন করতে পারিনি। আমার জ্ঞানত, নড়াইলের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু আমি করেছি। তবুও কেন আমার বাড়ি পোড়ানো হলো নিজেও জানি না।”