নিয়োগের পরপরই বিতর্ক ওঠার প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এম মাসরুর রিয়াজ। ফলে এই পদের জন্য এখন নতুন কাউকে খুঁজতে হচ্ছে সরকারকে।
মাসরুর তাকে নিয়োগের জন্য নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েই বলেছেন, তিনি সরকারি কোনও দায়িত্ব না নিয়ে বাইরে থেকেই কাজ করতে চান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগ করলে গত ১৩ আগস্ট গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুরকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ফেইসবুকে অনেকেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, পুঁজিবাজারের আলোচিত নাম সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মাসরুরের সম্পর্ক থাকার কথা তোলেন। দুজনের ঘনিষ্ঠতার নজির হিসাবে তাদের ছবিও দেন কেউ কেউ।
এরপর বিএসইসির কর্মকর্তাদের একাংশ মাসরুর রিয়াজের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলে। সেই আপত্তির মুখে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি তিনি।
এরমধ্যে গত ১৪ আগস্টই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে মাসরুরের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনটি সরিয়ে ফেলা হয়। ফলে তিনি থাকছেন, না থাকছেন না তা স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছিল না।
সেদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “তার (মাসরুর রিয়াজ) বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। সে বিষয়টি আমি দেখব। দেখে দুই-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।”
এরমধ্যেই বিএসইসিতে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়ে দিেয়ছেন মাসরুর।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি শনিবার সাংবাদিকদের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি সরকারি কোনও দায়িত্ব না নিয়ে বাইরে থেকেই কাজ করতে চান।
বিবৃতিতে মাসরুর বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আমাকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়োগের জন্য আমি আন্তরিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই।
“এই দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার দারুণ সুযোগ। দেশের স্বার্থ আমার কাছে বরাবরই সবকিছুর উপরে।”
সেই দায়িত্ব না নেওয়ার কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, “দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমি মনে করি আমার বর্তমান অবস্থান থেকে একজন অর্থনীতিবিদ হিসাবে দেশের এবং অর্থনীতির জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারব।
“একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে সামগ্রিক অর্থনীতি, বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং আর্থিক খাত সংক্রান্ত নীতি বিশ্লেষণ, সংস্কার কৌশল, এবং সংলাপের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির কল্যাণে কার্যকর নীতি প্রণয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় আমি সবিনয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মাসরুর রিয়াজের দায়িত্ব গ্রহণের অপারগতার বিষয়টি জানার পর বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগের জন্য নতুন করে যোগ্য ব্যক্তির খোঁজে নেমেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একাধিক ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করছে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।