বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে।
মামলায় গণহত্যায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদসহ ৩২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এ মামলা করেছেন আন্দোলনে নিহত নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাক।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আটটি মামলা হলো। এর মধ্যে সাতটি মামলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে। আর একটি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে।
সর্বশেষ মামলায় বলা হয়েছে, শ্যামলী রিং রোডে বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হন গোলাম রাজ্জাকের ছেলে ১৭ বছর বয়সী নাসিব।
বাদীর আইনজীবী গাজী এইচ তামিম জানিয়েছেন, আসমিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪ (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যেসব সাংবাদিক ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ‘গণহত্যা চালিয়ে নেওয়ার উস্কানি দেন’ তাদেরকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন।
আসামির তালিকায় সাংবাদিকদের মধ্যে আরও আছেন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু, সাংবাদিক ও টিভি সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরী, এবি নিউজ২৪ডটকমের সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, সময় টিভির এমডি আহমেদ যোবায়ের, এখন টিভির বার্তাপ্রধান ও সময় টিভির সাবেক বার্তাপ্রধান তুষার আব্দুল্লাহ, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, সমকালের সাবেক সম্পাদক আবেদ খান, এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান প্রভাষ আমিন, একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপা, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মিথিলা ফারজানা।
সাংবাদিকদের মধ্যে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- ডিবিসির সম্পাদক জায়েদুল হাসান পিন্টু, ডিবিসির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীস সৈকত, এশিয়ান টিভির হেড অব নিউজ মানষ ঘোষ, ডিবিসির প্রণব সাহা, সাবেক তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি, এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা, এটিএন বাংলার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, চ্যানেল আই এর সোমা ইসলাম, ইত্তেফাকের শ্যামল সরকার ও সমকালের অজয় দাশ।
আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদ্য জাহাঙ্গির কবির নানক ও সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।
আসামি করা হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হারুন অর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ এবং ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
আসামির তালিকায় আরও আছেন টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসান, আদাবর থানার ওসি মো. মাহাবুব রহমান, ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার এবং অধ্যাপক মেজবাহ কামাল।
