ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের রাজকোটের একটি গেমিং জোনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রাজকোটের জনপ্রিয় টিআরপি গেমিং জোনে শনিবার সন্ধ্যায় লাগা এই আগুনে বহু শিশু-কিশোরের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ২০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু।
শেষ বিকালে যখন গেমিং জোনের ভেতরে অনেকেই খেলতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ করেই আগুন লাগে সেখানে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে পুরো গেমিং জোন।
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর এখন উদ্ধার অভিযান চলছে।
হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯ জনই শিশু।
দ্য হিন্দু বলছে, নিহত ২৪ জনের মধ্যে ১২ জনই শিশু।
সাধারণত এই ধরনের গেমিং জোন ঘেরা জায়গায় তৈরি করা হয়। কার রেসিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের ইনডোর এবং আউটডোর গেমের ব্যবস্থাও থাকে সেখানে। মজুত থাকে টায়ার, প্লাস্টিকের মতো অতিদাহ্য পদার্থ। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, বলছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। এজন্য রাত সাড়ে ৮টা অবধিও আগুন নেভানো যায়নি।
এই অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ গেমিং জোনের মধ্যে অনেকে আটকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যাদের মধ্যে হয়ত শিশু-কিশোরও রয়েছে।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, গেমিং জোনটির ভেতরে অন্তত ৩০টি শিশু ও তাদের বাবা-মায়েরা আটকা পড়েছেন।
রাজকোট থানার পুলিশ কমিশনার রাজু ভার্গব সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “উদ্ধার অভিযান চলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “গেমিং জোনটি যুবরাজ সিং সোলাঙ্কি নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন। জোনটিতে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় অবহেলার জন্য আমরা একটি মামলা নথিভুক্ত করব। তবে আমি অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করতে পারছি না। এটি তদন্তের বিষয়।”
একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, “আগুনের কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। আমরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের কোনও বার্তা পাইনি। অস্থায়ী কাঠামোগুলো ধসে পড়ায় এবং বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় আমরা অগ্নিনির্বাপণ অভিযানে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পর আমরা জোনের ভেতরে হতাহতের সঠিক সংখ্যা খুঁজে বের করতে সক্ষম হব। আমরা আগুনের কারণও তদন্ত করে দেখব। শহরের সমস্ত গেমিং জোন বন্ধ রাখার জন্য আদেশ জারি করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের পোস্টে তিনি বলেছেন, “রাজকোটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা। আহতদের জন্য প্রার্থনা। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য কাজ করছে।”
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল বলেছেন, “রাজকোটের গেম জোনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন এবং প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসাপাতালগুলোকেও আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”