হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন আবির্ভাবেই। ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে মাথিশা পাথিরানার একটি বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার! অথচ ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ গতির বলটি ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটারের।
আইসিসির ভুলে ১৭৫ কিলোমিটার
২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের ১৬১.৩ কিলোমিটার গতির রেকর্ড ভাঙতে পারেননি ব্রেট লি, মিচেল স্টার্কের মত পেসাররা। সেখানে যুব বিশ্বকাপে কিনা শ্রীলঙ্কান এক তরুণ বল করেছেন ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার গতিতে!
বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না কেউ। দিনভর চলে পাথিরানার গতি নিয়ে আলোচনা। শেষ পর্যন্ত আইসিসি জানায় স্পিড গানে ভুল ছিল। পাথিরানার বলের গতিটা সঠিক নয়।
ঘন্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে হয়ত বল করেননি পাথিরানা। হননি গতির রাজাও। তবে ২১ বছরের এই ফাস্ট বোলার গতি দিয়ে মাতাচ্ছেন লঙ্কান ক্রিকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বল করছেন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে। বর্তমান সময়ে খুব কম পেসারই বল করেন এত বেশি গতিতে।
মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে বেবি মালিঙ্গা
পাথিরানার বলের ধরন অনেকটা লাসিথ মালিঙ্গার মত। এজন্য তার ডাক নাম ‘বেবি মালিঙ্গা’। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গত মাসে সর্বশেষ খেলা সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে মালিঙ্গার একটা রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি।
২-১ ব্যবধানে জেতা সিরিজে স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের পাথিরানা পান ৮ উইকেট, তিন ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কোন লঙ্কান বোলারের যা সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গা নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। এছাড়া ৭টি করে উইকেট ছিল নুয়ান প্রদীপ (২০১৯, বিপক্ষ পাকিস্তান) ও দুশমন্থ চামিরার (২০২২, বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া)।
আইপিএলে সর্বোচ্চ ওয়াইড
সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএল জেতা বিদেশি ক্রিকেটারের রেকর্ডটা পাথিরানার। গত বছর মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাইয়ের হয়ে জিতেছিলেন এই শিরোপা। ১২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রাখেন তাতে।
প্রয়োজনের সময় আর ডেথ ওভারে উইকেট নেওয়ার দারুণ দক্ষতাও দেখিয়েছিলেন পাথিরানা। তবে গতির ঝড় তুলতে গিয়ে লাইন-লেন্থ হারিয়ে বসেন প্রায় সময়। গত আইপিএলে সর্বোচ্চ ২৯টি ওয়াইড দিয়েছিলেন তিনিই। পাথিরানার চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলা মোহাম্মদ সিরাজের ওয়াইড ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭টি।
সিলেটে ৩৬ বলে কোটাপূরণ
টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারই করতে পারেন কোনও বোলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিলেটে প্রথম ম্যাচে পাথিরানাও করেছিলেন ৪ ওভার। তবে ২৪ বলের জায়গায় কোটা পূরণ হয়েছে ৩৬ বলে! ওয়াইড করেছিলেন ৯টি, নো বল ৩টি। অর্থাৎ বাড়তি ২ ওভার বল করেছেন পাথিরানা। ২০৬ রান তাড়া করতে নেমে এজন্যই জয়ের বন্দরে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
সেই ম্যাচে আবার পাথিরানার ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতির একটা বাউন্সার সামলাতে না পেরে আউট হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
পাথিরানার বোলিং নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাদিরা সামারাবিক্রমা বলেছিলেন, ‘‘আসলে মাঠে অনেক শিশির ছিল। এখানে বল করাটা সহজ ছিল না। ফিল্ডারদের জন্যও ফিল্ডিং করা সহজ কাজ ছিল না। তার ক্র্যাম্পও হয়েছিল পায়ে। দুর্ভাগা ছিল পাথিরানা।’’
ওয়ানডেতে ওয়াইডের মাইলফলক
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাইন লেংথ ঠিকই রাখতে পারছিলেন না পাথিরানা। দিয়েছিলেন ১৮টি ওয়াইড! এরপর চোটের জন্য বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে যায় তার।
গত বছরের জুনে অভিষেকের পর ১২ ওয়ানডে খেলেছেন পাথিরানা। ওয়াইড দিয়েছেন ৫৭টি। জুন থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত খেলা ওয়ানডেতে এত বেশি ওয়াইড দেননি আর কেউ।
সে সময় পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি জোসেফ ৭ ম্যাচে দিয়েছিলেন ২২টি ওয়াইড। আফগানিস্তানের ফজল হক ফারুকি ১২ ম্যাচে ২১ আর মুজিব উর রহমান ১২ ম্যাচে দিয়েছিলেন ২১টি ওয়াইড। ৫৭’র তুলনায় ২২ কিংবা ২১ আনলে ওয়াইডের বাদশা বলতেই হবে পাথিরানাকে।
পাথিরানার ৫৭টি ওয়াইড থেকে রান এসেছে ৯১টি! দিশাহীন বলগুলো যে ধরতে পারেননি উইকেটরক্ষকও। তাই বাউন্ডারি হয়েছে উইকেটের পেছন দিয়ে। এই সময়ে ২১টি ওয়াইডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রান দিয়েছিলেন মুজিব উর রহমান।
তবু আস্থার নাম
এমন খরুচে বোলিংয়ের পরও লঙ্কান একাদশে জায়গা নিশ্চিত থাকে পাথিরানার। কারণ প্রয়োজনের সময় উইকেট নিতে পারার দক্ষতা। সিলেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে যেমন। ১৬৫ করে লঙ্কানরা হেরেছে ১১ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে। বাংলাদেশের দুই উইকেটের দুটিই নিয়েছিলেন পাথিরানা। ম্যাচে ৩.৪ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ২৮টি।
বলে রাখা ভালো, মিতব্যয়ী বোলিংয়েও পাথিরানা ওয়াইড দিয়েছিলেন ৪টি! এমনি এমনি তো ওয়াইডের রাজা বলা হচ্ছে না তাকে।