রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য, কিন্তু তার ব্যক্তিজীবন একেবারেই সাদামাটা। আটপৌরে সুতি শাড়ির আড়ালে বাস করা বাংলাদেশের রাজনীতির ‘অগ্নিকন্যা’ মতিয়া চৌধুরীর শেষবিদায়টাও হলো ঠিক তার রোজকার জীবনের মতোই সাদামাটা।
এমনকি চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার আগে গার্ড অব অনারও দেওয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠককে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মতিয়া চৌধুরী শায়িত হন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামী সাংবাদিক বজলুর রহমানের কবরে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা হয় তার। তবে সেখানে দেখা যায়নি দলের শীর্ষ কোনও নেতাকে। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে অপ্রকাশ্যে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগ। আবার অনেকের মাথার ওপর ঝুলছে মামলার খড়্গ।
তবে আজাদ মসজিদে বনানী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় মতিয়া চৌধুরীকে। এই সংগঠনের নেতাকর্মীরাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ফুল দেয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিবার, দৈনিক সংবাদ পরিবার, বিশেষ গেরিলা বাহিনী, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকেও কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জানাজা শেষে মতিয়া চৌধুরীর লাশবাহী গাড়ি আজাদ মসজিদ ছেড়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তাকে বিদায় জানান।
সকালে রমনায় তার বাসায় প্রথম জানাজাতেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেসসময় তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান রাজনৈতিক সহকর্মী, অনুসারী ও স্বজনরা। সেখানে হয় প্রথম জানাজা।
মতিয়া চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ছয় বার। তিন দফায় মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।
তবে তার কোনও জানাজাতেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়ার কোনও আয়োজন ছিল না। ছিলেন না প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তিও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সলাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন বলেন, “আমাদের মতিয়া চৌধুরীর গার্ড অব অনারের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। জানাজাসহ যাবাতীয় কার্যক্রম শেষ করে আমাদের এখানে শুধু দাফন করা হয়েছে। সাধারণত যেখানে জানাজা পড়ানো হয় সেখানেই গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।”
গুলশানে জানাজা হলেও এই থানার ওসি তৌহিদ আহমেদ বলছেন, মতিয়া চৌধুরীকে গার্ড অব অনার দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
শেষ বিদায়ের সময় মতিয়া চৌধুরীর বোন মাহমুদা চৌধুরী বলেন, “তার সারাজীবন ত্যাগ আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কেটেছে, তিনি মানুষের জন্য করে গেছেন।”
তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি ইতিহাসের পরিসমাপ্তি হলো বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এসেছিলেন সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলও।
মতিয়া চৌধুরীর অধ্যায়ের এমন সময় পরিসমাপ্তি ঘটল যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে দলটিকে, দেশ ছাড়তে হয়েছে দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে।