গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলির বড়ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে তুলে নেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানী ঢাকার শাহীনবাগের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল।
বিকাল ৫টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী রিপোর্ট করেছিল চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির। যৌথ বাহিনীর অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাকে আটক করে। তাকে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পে রাখা হয়।
বিকাল ৫টার দিকে ফোন করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী। এ সম্পর্কে আইএসপিআর প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালে ছোটভাই সাজেদুল ইসলাম সুমনকে হারিয়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে কাজ করতে মায়ের ডাক নামের সংগঠনটি গড়ে তোলেন তুলি।
বড়ভাই শ্যামলকে সেনাবাহিনীর তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তুলির মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
শাহীনবাগের ওই বাসা থেকে শ্যামলকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।
ভিডিওতে বাড়ির সামনে অস্ত্রধারী কয়েকজন সেনা সদস্যকে আসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একজন বড়ির মূল দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। তারপর হাতের ইশারা করেন বাইরে থাকা সেনা সদস্যদের দিকে। তখন আরও দশ জন সেনাসদস্য ও দুইজন সাদা পোশাকধারী লোক ভেতরে ঢোকেন। বাইরে তখন দুজন সেনা কর্মকর্তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় দুই মিনিট পর কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা বের হয়ে যান। তাদের সঙ্গে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত দাড়িওয়ালা একজনকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সেই ব্যক্তিই সাইফুল ইসলাম শ্যামল। এসময় শ্যামলের মা ও একজন নারী সদস্যকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়।
ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালে গুম হন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আসছেন সানজিদা তুলি। ২০২২ সালে শাহীনবাগের এই বাসায় গিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে গুমের সব ঘটনার বিচার চান মায়ের ডাকের আহ্বায়ক তুলি। একই দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছে মায়ের ডাক।
শ্যামলের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন সকাল সন্ধ্যাক বলেন, “আমি আসলে বসুন্ধরার সামনে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু জানি না। শুনেছি যৌথ বাহিনীর একটা অভিযান চলছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, ছোটোভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও শ্যামল কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। সুমন দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার সময় এলাকায় এই পরিবারের ব্যাপক আধিপত্য ছিল।
