সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলে পৌঁছেছে। সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এতে আটকা পড়া ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন।
বৃহস্পতিবার নাবিকদের মধ্যে কয়েকজন তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন। সেখানে জাহাজের সবশেষ অবস্থা বর্ণনা করেছেন তারা।
এমন একটি অডিও রেকর্ড সকাল সন্ধ্যার কাছে এসেছে।
সেখানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত জাহাজের ২৩ নাবিককে ব্রিজে বা উপরের অংশে রাখা হয়। তাদের পাহারা দিয়েছে অস্ত্রধারী দস্যুরা। সেখানেই তাদের রাত কাটাতে হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার উপকূলে পৌঁছার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নাবিকদের অনুরোধে তাদের ব্রিজ থেকে কেবিনে পাঠানো হয়েছে।
ভয়েস মেসেজে এক নাবিক জানান, তারা সবাই নিরাপদে আছেন। কারেও গায়ে হাত তোলেনি দস্যুরা। তবে এরই মধ্যে দুটি বড় ফ্রিগেট বা সমরাস্ত্র সজ্জিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি এসেছিল। তারা দস্যুদের আক্রমণের চেষ্টাও করে। কিন্তু তাতে সুফল মেলেনি। কারণ যতবারই ফ্রিগেট থেকে গুলি করা হয়েছে ততবারই জলদস্যুরা নাবিকদের এক কাতারে রেখে মাথায় অস্ত্র তাক করে রেখেছে।
গুলি চালানো হলে জিম্মি নাবিকদের হত্যা করা হবে, এমন বার্তাও ওই ফ্রিগেটে পাঠানো হয় বলেও জানানো হয়েছে অডিও বার্তায়। এর ফলে ফ্রিগেট দুটি আর এগোয়নি।
অডিও বার্তায় সেই নাবিক আরেও বলেন, “ব্রিজ থেকে আমরা এখন জাহাজের কেবিনে আছি। আবার কখন ব্রিজে নিয়ে যাওয়া হবে তার কোনও ঠিক নেই। ফলে আমরা পরিবারের কাছে দোয়া চাইছি। আমাদের মনোবল শক্ত আছে। কতদিন এই মনোবল শক্ত রাখা যাবে তা জানি না।”
সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলে এবং জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে নাবিকদের উদ্ধারে চেষ্টার উদ্যোগের বিষয়টি নাবিকরা জানতে পেরেছেন, ভয়েস মেসেজে সেই তথ্যও জানা গেছে।
কবির গ্রুপের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা মিজানুল ইসলামও নাবিকদের নিজ নিজ কেবিনে যাওয়ার সুযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করলেন।
তবে দস্যুরা মুক্তিপণ বিষয়ে মালিকপক্ষের কাছে এখনও কোনও দাবি উত্থাপন করেনি বলে জানান তিনি।
নাবিকদের নিরাপদে অর্থাৎ ব্রিজ থেকে আরামের স্থান কেবিনে পাঠানোকে জলদস্যুদের কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এগুলো জলদস্যুদের নিয়মিত কৌশল। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়াটাও একটি কৌশল। মূলত পরিবারের মাধ্যমে দস্যুরা সবাইকে জানাতে চায় যে নাবিকরা নিরাপদে আছেন।
“আবার এক ধরনের চাপও তৈরি করা হয়, কেউ যাতে মুক্তিপণের বাইরে অন্য কোনও উদ্যোগ বা চেষ্টা না করেন। এখানে মুক্তিপণই মূল ফোকাস।”
২০১০ সালে এমভি জাহান মনি আটকের সময়ও এ ধরনের কৌশল দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।
মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনের তথ্যানুযায়ী, জিম্মি করার সময় জাহাজটির অবস্থান ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬৫০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ভারত মহাসাগরে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাজটি উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে সোমালিয়া উপকূলের গারাকাদ অঞ্চলে নোঙর করে রাখে।
গারাকাদ ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত একটি অঞ্চল। এটি সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর খুব কাছে। গারাকাদে একটি সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। এই সমুদ্রবন্দর ঘিরেই মুলত সোমালি দস্যুদের জিম্মি মুক্তিপণ আদায় কাজ চলে। এলাকাটি সোমালিয়ার দস্যুদের একটি বড় গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।