Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

মায়ামি : শুধু মেসির নয় আর্জেন্টাইন ফুটবলেরও নতুন ঠিকানা    

মায়ামিতে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উন্মাদনা  শুরু হয়েছে পেরুর বিপক্ষে ম্যাচের অনেক আগেই। ছবি: মুস্তাফিজুর পাপ্পু।
মায়ামিতে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উন্মাদনা শুরু হয়েছে পেরুর বিপক্ষে ম্যাচের অনেক আগেই। ছবি: মুস্তাফিজুর পাপ্পু।

মায়ামিকে নতুন ঠিকানা বানিয়েছেন লিওনেল মেসি। সেটাও প্রায় বছরখানেক তো হলোই। গত বছর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন আর্জেন্টাইন তারকা।

এরপর থেকেই মায়ামি যেন হয়ে উঠেছে এক টুকরো আর্জেন্টিনা। শুধু মেসি খেলছেন বলেই মায়ামিতে বেড়ে গেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থক। ক্লাবটিও যেন স্বপ্নের মতো সময় পার করছে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে মাঠে ও মাঠের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলেও পরাশক্তিতে পরিণত হছে ইন্টার মায়ামি। তাছাড়া ‘মেসি-ম্যানিয়া’ তো আছেই। মায়ামিতে বাস করার সুবাদে এই ‘মেসি ম্যানিয়া’ বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছি আমি। নাপোলিতে যেমন ম্যারাডোনা, এখানে তেমন মেসি। শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে এরই মধ্যে মেসির মুর‌্যাল দেখেছি। দেখেছি বিভিন্ন বাড়ির ছাদে কিভাবে উড়ছে আর্জেন্টিনার পতাকা।

মায়ামি শহরের দেওয়াল জুড়ে এভাবেই দেখা মেলে মেসির মুর‌্যালের। ছবি: সংগৃহীত।

ইন্টার মায়ামির মেসি হয়তো কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে নাও খেলতে পারেন। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোর ৬টায়) পেরুর বিপক্ষে খেলতে নামবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচটি হবে মায়ামি গার্ডেনসের হার্ড রক স্টেডিয়ামে। কিন্তু মেসি না খেললেও আর্জেন্টিনা যে ঘরের মাঠের সুবাসই পাবে এখানে সেটা বলতেই পারি।    

স্টেডিয়ামের ৬৫,৩০০ সিটের সব টিকিট ‘সোল্ড আউট ’। শুধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ফুটবল দেখার অপেক্ষায় উন্মাদনায় ফুটছে আকাশী নীল সমর্থকেরা।

কানাডা ও চিলির বিপক্ষে জিতে এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা নক আউট নিশ্চিত করে ফেলেছে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মেসি পেরুর বিপক্ষে হয়তো থাকবে না, এটাও সংবাদ মাধ্যমের সুবাদে জেনেছি। এত কাছে থেকেও মেসিকে দেখতে পাবেন না, আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত স্থানীয়দের কাছে এটা একটা বিরাট ধাক্কার মতোই ঘটনা। যদিও সবার আশা, দ্রুতই মেসি সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরবেন। এবং এই ভেন্যুতেই ১৪ জুলাই খেলবেন ফাইনালে।

মায়ামির বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছে আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা। ছবি: লেখক।

মায়ামি সম্প্রতি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) স্থায়ী নিবাসও হয়ে গেছে। ব্যাপারটা খুলেই বলি। গত ডিসেম্বরে মায়ামির উইনউড জেলায় এএফএর যুক্তরাষ্ট্রের সদর দপ্তর বানিয়েছে। এখানেই থেমে থাকেনি এএফএ। মায়ামিতে জাতীয় দলের অনুশীলনের যাবতীয় সুযোগ সুবিধাও দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এমনকি ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে স্পোর্টস লিডারশিপ প্রোগ্রামও চালু করেছে তারা।

ক্লাব পর্যায়েও যেন আর্জেন্টাইন বিপ্লব চলছে এখানে। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে মায়ামির ফোর্ট লাওডারডেলে মেসিরা আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু করে। এমএলএসে এই মৌসুমে ১৪ আর্জেন্টাইন ফুটবলার খেলছে। মেসিসহ যাদের ৮ জনই বর্তমান একাদশে।

এখানে আমি এসেছি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশি হওয়ায় প্রচুর আর্জেন্টাইনের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে যেভাবে বাংলাদেশ আলবিসেলেস্তাদের সমর্থন দিয়েছিল, সেই কৃতজ্ঞতা ওদের চোখে মুখে টের পাই। ওদের সঙ্গে কথা বলেই জেনেছি, গত ২০ বছরে প্রচুর পরিমাণে আর্জেন্টাইন অভিবাসীরা ব্যবসা ও চাকরির জন্য মায়ামিতে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে।

আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সঙ্গে সেলফি লেখকের।

এদেরই একজন হোসে কারদোজো। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আর্জেন্টিনার জয় উপভোগ করতে চান। হোসে বলছিলেন, “আমরা মায়ামিতে আছি। কিন্তু মনে হয় দেশেই আছি। এখানে আর্জেন্টিনার মতোই সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে।” তিনি যোগ করেন, “পেরুর বিপক্ষে ৩ -০ গোলের ব্যবধানে জিতবে আর্জেন্টিনা।”

আর্জেন্টাইন সমর্থকদের এই মিলনমেলায় পুরা মায়ামি জুড়ে আকাশী-সাদায় ছাওয়া। কেউ এসেছেন দলের জার্সি পড়ে, কেউ এসেছেন প্রিয় দলের পতাকা নিয়ে। পুরো মায়ামি শহর এখন আর্জেন্টাইনদের দখলে।

শুক্রবার শহরের বিসকেইন বোলভার্ডের আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুঘরে জড়ো হয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। যেখানে রাখা হয়েছে আর্জেন্টিনার তিনটি বিশ্বকাপ। প্রায় ১০ হাজার দর্শক টিকিট কেটে এটার সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পাচ্ছে।

মায়ামির সব জায়গায় শুধু মেসি আর আর্জেন্টিনার গল্প। ছবি: লেখক।

দক্ষিণ ফ্লোরিডায় যেখানে আমি থাকি, সেখানে প্রচুর আর্জেন্টাইন থাকে। এটা বলাই যায়, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের উপস্থিতি এই শহরের মানুষদের দিয়েছে বাড়তি স্বস্তি ও আনন্দ। অনেকে তো উইনউডে টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল ফ্যানজোনের বড় পর্দায় খেলা দেখার জন্য জড়ো হয়েছে। অন্য যারা জায়গা পায়নি, তারা ছোট ছোট আর্জেন্টাইনদের রেঁস্তোরা, পানশালায় জড়ো হয়েছে। আর্জেন্টিনা থেকে আসা এই সমর্থকদের যেন আনন্দের সীমা নেই।

তাদের কাছে ব্যাপারটা এমন যে, আর্জেন্টিনা জাতীয় দল এখানে, স্থানীয় অভিবাসীরাও মেসিদের খুব কাছাকাছি আছে। তাই যেন তাদের মনে হচ্ছে ওরাও দেশেই আছে।

হতে পারে এটাই মেসির শেষ কোপা। আগামী বিশ্বকাপে মেসি খেলবেন কিনা জানি না। কিন্তু মায়ামিতে বসবাসকারী আর্জেন্টাইনদের চোখে দেখেছি, একটাই চাওয়া-মায়ামিতেই আবারও মেসির হাতে উঠুক আরেকটি কোপার ট্রফি। যেভাবে দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে মাথার ওপরে মেসি তুলে ধরেছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সোনালি ট্রফিটা।

 লেখক পরিচিতি : ডাক্তার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু

সাধারণ সম্পাদক, আটলান্টিস বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট লাইফ অর্গানাইজেশন

মায়ামি, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত