একটা ন্যাপকিন পেপার। কতই-বা মূল্য তার! ছুড়ে ফেলা হয় প্রয়োজন শেষে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি ন্যাপকিন পেপার আছে যেটির আছে অন্যরকম মাহাত্ম্য। যার ওপর লেখা হয়েছিল বার্সেলোনার সঙ্গে লিওনেল মেসির প্রথম চুক্তি। সেই ‘ন্যাপকিন পেপার’ এবার উঠতে যাচ্ছে নিলামে।
সামনের মাসে ব্রিটিশ অকশন হাউস বোনহামসের মাধ্যমে মেসি-বার্সার চুক্তি স্বাক্ষরিত ‘ন্যাপকিন পেপার’ নিলামে তোলা হবে। এটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি টাকারও বেশি।
ঐতিহাসিক এই ‘ন্যাপকিন পেপার’ নিলামে ওঠায় সেটি সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে মেসি ও ফুটবলপ্রেমীদের। শেষ পর্যন্ত কার সংরক্ষণে এটি যাবে, সেটা জানা যাবে ১৮ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত চলা অনলাইন নিলামে। এই সময়কালে যে বা যিনি সর্বোচ্চ দাম হাঁকাতে পারবেন, তার হাতেই যাবে ‘মহামূল্যবান’ ন্যাপকিন পেপার।
20 years ago today, a 13-year-old Leo Messi arrived in Barcelona.
— Bleacher Report (@BleacherReport) September 17, 2020
Some feared he was too small and too expensive.
He signed his first contract on a paper napkin, and then proved them all wrong 🐐 @brfootball pic.twitter.com/JqoOX1SWyY
২০০০ সালে হয়েছিল মেসি-বার্সেলোনার ঐতিহাসিক চুক্তি। ১৩ বছরের মেসি কাতালান ক্লাবটিতে ট্রায়াল দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। কিন্তু চুক্তিতে গড়িমসি করছিল বার্সেলোনা। ফলে জন্মস্থান রোজারিওতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মেসি ও তার পরিবার। ওই সময় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের এজেন্ট ছিলেন হোরাসিও গাগিওলি। তিনি বার্সেলোনার খেলোয়াড় রিক্রুমেন্টের দায়িত্ব থাকা কর্তাব্যক্তিদের জানান, তারা যদি মেসির সঙ্গে চুক্তি না করেন, তাহলে অন্য ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কারণ ওই সময় মেসিকে পাওয়ার দৌড়ে ছিল বেশ কয়েকটি ক্লাব, যার মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদও ছিল।
এই যখন অবস্থা, তখন হঠাৎ মেসির পরিবারকে দুপুরের খাবারে আমন্ত্রণ জানান তখনকার বার্সেলোনা পরিচালক কার্লোস রেক্সাস। ওই মুহূর্তেই তিনি মেসির সঙ্গে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হাতের কাছে ছিল না কাগজ। অগত্যা সামনে থাকা ন্যাপকিন পেপারেই হয়ে যায় ঐতিহাসিক চুক্তি। বার্সেলোনায় মেসির পরের গল্পটা সবারই জানা।
রেক্সাস ছাড়াও সেই ন্যাপকিন পেপারে সই আছে বার্সার দলবদল-বিষয়ক পরামর্শক জোসেপ মিনগেলা ও এজেন্ট গাগিওলির। চুক্তিতে লেখা ছিল, ‘বার্সেলোনায়, ১৪ ডিসেম্বর ২০০০; জোসেপ মিনগেলা, হোরাচিও ও বার্সেলোনার ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাসের উপস্থিতিতে পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে নির্দিষ্ট অঙ্কে লিওনেল মেসিকে সই করানোর ব্যাপারে একমত হওয়া গেল।”
সেই থেকে চুক্তি হওয়া ‘ন্যাপকিন পেপার’ সংরক্ষণে আছে গাগিওলির কাছে। সেটিই এবার নিলামে উঠতে যাচ্ছে। যদিও ঐতিহাসিক এই চুক্তির কাগজ প্রাথমিকভাবে বার্সেলোনার জাদুঘরে রাখার পরিকল্পনা ছিল। বিনামূল্যে এটি দেওয়ার আলোচনা করেছিলেন গাগিওলি। কিন্তু কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে মতের মিল না পড়ায় নাকি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মেসির এই এজেন্ট।
এখন কি নিলামের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ন্যাপকিন পেপার নিজেদের সংরক্ষণে রাখবে বার্সেলোনা? মেসির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খেলোয়াড়টির শৈশব থেকে। তিনি এখন ক্লাবটিতে নেই। তবে কাতালুনিয়ার রাজধানীতে রেখে গেছেন কীর্তিময় অধ্যায়। স্মরণীয় সব মুহূর্তের জন্ম দিয়ে গড়েছেন একের এক এক রেকর্ড। নিজেদের ইতিহাস তো বটেই, সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের প্রথম চুক্তির ‘সনদ’ অন্য হাত হতে দিতে চাইবে বার্সেলোনা? এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে, নিলামে বার্সেলোনার উপস্থিতি থাকতে পারে।