ফুটবল দলীয় খেলা। দলের সাফল্যই এখানে মুখ্য। ক্লাব কিংবা জাতীয় দল- দুই ক্ষেত্রেই শিরোপায় চোখ রেখে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেন ফুটবলাররা। দলীয় এই সাফল্যই আবার বয়ে আনে ব্যক্তিগত পুরস্কারের উপলক্ষ। সেই পুরস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম ফিফা ‘দ্য বেস্ট’।
বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সম্মাননা জেতার লক্ষ্য থাকে সব ফুটবলারেরই। বছর ঘুরে আবার এসেছে সেই উপলক্ষ। ২০২৩ সালের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বেছে নেওয়া হবে ‘দ্য বেস্ট’। মঞ্চটাও প্রস্তুত। অপেক্ষা শুধু সেরা খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণার।
অনুষ্ঠান কখন
২০২৩ ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ অনুষ্ঠানের এবারের আয়োজক শহর লন্ডন। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ঘোষণা করা হবে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের নাম। বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ১-৩০ মিনিটে শুরু হবে ফিফার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান।
বর্ষসেরা নির্বাচনের প্রক্রিয়া
১৯৯১ সালে চালু হয় ফিফার অ্যাওয়ার্ড। তখন নাম ছিল ‘ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়’। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই নামেই ছিল। তবে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যালন ডি’অরের সঙ্গে মিলে পুরস্কারটি দেওয়া হয় “ফিফা-ব্যালন ডি’অর” নামে। এরপর ২০১৬ সাল থেকে হয়ে আসছে ‘দ্য বেস্ট’।
সেরা পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়- দুই ক্যাটাগরিতেই বর্ষসেরা ফুটবলার বেছে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় থাকে ভোটিং সিস্টেম। চার গ্রুপে ভাগ হয়ে ভোটাররা তাদের সেরা খেলোয়াড় বেছে নিতে পারেন। চারটি গ্রুপে থাকেন- জাতীয় দলের কোচ, জাতীয় দলের অধিনায়ক, সাংবাদিক ও ফুটবল ভক্ত।
তারা সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ১২ খেলোয়াড়কে পছন্দক্রম অনুযায়ী ভোট দিতে পারেন। একজন ভোটার সর্বোচ্চ তিনজনকে ভোট করতে পারেন। পছন্দ অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়- এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের রায় জানান। এখানে প্রথম পছন্দের খেলোয়াজের জন্য বরাদ্দ ৫ পয়েন্ট, দ্বিতীয় অবস্থানে রাখা খেলোয়াড় ২ পয়েন্ট ও সবশেষে রাখা খেলোয়াড় পান ১ ভোট। সবার মিলিত ভোটে যিনি এগিয়ে থাকেন, তিনিই জেতেন বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
কারা আছেন সেরার দৌড়ে
এবার ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ছেলেদের ‘দ্য বেস্ট’- এর ক্ষেত্রে। সেখান থেকে বাছাই করে ফিফা ১২ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা জানায় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। এরপর ভোটাররা তাদের পছন্দের তিন খেলোয়াড়কে ভোট দিতে পেরেছেন।
তাদের রায়ে শীর্ষ তিনে থাকা চূড়ান্ত তালিকা জানানো হয় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত তিনে আছেন লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড।
গত বছর ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ জিতেছেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিতিয়ে শিরোপা-চক্র পূরণ করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করার অপেক্ষায় আর্জেন্টাইন তারকা। গত মৌসুমে প্যারিস সেন্ত জার্মেয়ের লিগ জয়ের পথে আলো ছড়িয়েছিলেন তিনি। লিগ ওয়ানের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট ছিল তার। এছাড়া জাতীয় দলের জার্সিতে গোলের ‘সেঞ্চুরি’ পূরণ করেছেন। বসেছেন বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে।
মেসি এখন ইউরোপে নেই। নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৩৬ বছর বয়সী বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে। ইন্টার মায়ামির জার্সিতেও চেনা ছন্দে আছেন তিনি।
গত বছর পিএসজিতে মেসির সতীর্থ ছিলেন এমবাপ্পে। ছিলেন দ্য বেস্টের লড়াইয়েও। যদিও ২০২২ সালের অ্যাওয়ার্ডে মেসির কাছে হেরে যান। এবারও আছেন পুরস্কারটির দৌড়ে।
তবে এবারের ফিফা অ্যাওয়ার্ডে ফেভারিট ধরা হচ্ছে হলান্ডকে। ম্যানচেস্টার সিটির ‘গোল মেশিন’ মাঠে নামলেই গড়ছেন নতুন রেকর্ড। তার গোল উৎসবে ম্যান সিটি জিতেছে ইতিহাসের প্রথম ট্রেবল। প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপের সঙ্গে পেপ গার্দিওলার দল পেয়েছে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ।
একনজরে
এখন পর্যন্ত ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন ১৬ খেলোয়াড়। এর মধ্যে মেসি (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২২) ও রোনালদোই জিতেছেন (২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭) ১২বার।
দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার ব্রাজিলের। রোনালদো (১৯৯৬, ১৯৯৭ ও ২০০২), রোনালদিনহো (২০০৪ ও ২০০৫), রোমারিও (১৯৯৪), রিভালদো (১৯৯৯) ও কাকার (২০০৭) হাত ধরে ব্রাজিলে ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গিয়েছে আটবার।
ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বাইরে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন লাইবেরিয়ার কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহ।