Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

আবারও আটকাল মেট্রোর চাকা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মেট্রো রেলের পল্লবী স্টেশন
মেট্রো রেলের পল্লবী স্টেশন
[publishpress_authors_box]

যানজটের নগরী ঢাকার গণপরিবহনে স্বস্তি আনা মেট্রোরেল চলাচল কোনও কারণে বিঘ্নিত হলে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে স্টেশনগুলো। বিদ্যুতের ঘাটতি, সিগন্যাল সিস্টেমে ত্রুটি, রেলের তারে ঘুড়ি আটকানোসহ নানা কারণে হঠাৎ হঠাৎ চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। এ নিয়ে ক্ষোভের মধ্যে শনিবার আবারও বিঘ্নিত হয়েছে মেট্রোরেল চলাচল, যেদিন যাত্রী চাপ সামলাতে ৮ মিনিট পরপর ট্রেন চালু করা হয়েছে।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে পল্লবী স্টেশনে আটকা পড়ে একটি ট্রেন। আধা ঘণ্টার বেশি সময় ছিল এ অচলাবস্থা। এ সময় ট্রেনের ভেতরে আটকে থাকেন যাত্রীরা, ফলে এই স্টেশনের পাশাপাশি অন্যান্য স্টেশনেও বাড়তে থাকে যাত্রীদের ভিড়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তবে কী কারণে আটকে ছিল ট্রেন সে বিষয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার সকালেও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল মেট্রোরেল চলাচলে। ডিএমটিসিএল জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে কিছু সময় শিডিউল অনুযায়ী রেল পরিচালনা করা যায়নি। বিদ্যুতের ঘাটতি ও সিগন্যাল সিস্টেমে ত্রুটিই এর কারণ। এর আগে বুধবারও রেলের তারে ঘুড়ি আটকে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল ঘণ্টাখানেক ব্যাহত হয়।

বন্ধ হয়ে থাকা মেট্রোরেলের দরজা খোলা।

রাজধানীর গণপরিবহনে মেট্রোরেল যুক্ত হওয়ার পর অফিসগামীসহ অন্যদের চলাচল অনেক সহজ হওয়ায় শুরু থেকেই এতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। কোনও কারণে চলাচল বিঘ্নিত হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে যাত্রীদের চাপ সামলাতে শনিবার নতুন সূচিতে শুরু হয়েছে মেট্রোরেল চলাচল। বাড়ানো হয়েছে ২৬টি ট্রিপ।

আগে প্রতিদিন ১৫২টি ট্রিপ ছিল, ১০ মিনিট পরপর স্টেশনে ভিড়ত ট্রেন। সেই সময় শনিবার থেকে ২ মিনিট কমিয়ে করা হয়েছে ৮ মিনিট পরপর। ফলে ট্রেনের ট্রিপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৮টিতে।

পল্লবীতে আটকা রেল

নতুন সূচি স্বস্তি আনবে এমন আশায় শনিবার দুপুরে পল্লবী স্টেশনে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আইরিন সুলতানা। অফিসের জন্য আগারগাঁও স্টেশন যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আটকা পড়েন ট্রেনে।

এ নিয়ে সকাল সন্ধ্যার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই যাত্রী। বিকাল ৩টা ৭ মিনিটে তিনি বলেন, “পল্লবী স্টেশনে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে মেট্রো থেমে আছে। মাঝে দুবার দরজা খুলেছে। এখন সবাই বন্ধ দরজায় আটকা।”

বিকাল ৩টা ৯ মিনিটে আইরিন বলেন, “এখন আবার দরজা হা করে খুলে দিল।”

প্লাটফর্মে ভিড় করে থাকা যাত্রীরা।

ক্ষুব্ধ আইরিন ৩টা ২০ মিনিটে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাইরে আসলাম। মেট্রোরেলের লোকজন বলছে, কাজ চলছে। দরজার সিগনাল পাচ্ছে না। কতক্ষণ লাগবে বলা যাচ্ছে না।”

পল্লবী স্টেশনে আটকা পড়েছিলেন আরেকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সামসুজ্জামান জয়। তিনি দুপুর আড়াইটার দিকে পল্লবী থেকে আগারগাঁও যেতে উঠেছিলেন মেট্রোতে। কিন্তু আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছেন।

সামসুজ্জামান জয় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রায় আধা ঘণ্টা হবে আটকে আছি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে থেমে আছে। তবে বুঝতেছি না কী হয়েছে।”

ট্রেনে প্রচুর ভিড় জানিয়ে তিনি বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। তাই প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী আটকে আছে।”

ঢাকা মেট্রোরেল হেল্পলাইন নামে ফেইসবুকে ২৩ হাজার সদস্যের একটি গ্রুপ আছে। এই গ্রুপে শনিবারের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এম ডি গোলাম মোস্তফা নামে একজন লিখেছেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আজকে অনির্দিষ্ট টাইমের জন্য মেট্রো চলাচল বন্ধ আছে। এটা স্বাভাবিক ভোগান্তি। বাঙালি হিসেবে আমাদের এসব আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে হবে।”

আব্দুল ওয়াজেদ নামে একজন লিখেছেন, “বিড়ম্বনার অপর নাম মেট্রো ট্রেন।”

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সম্রাট ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “আমি যেদিন মেট্রোতে উঠতে চাই সেদিনই সমস্যা। আজ ৫০ মিনিট বন্ধ।”

পল্লবীতে মেট্রো আটকা পড়ায় ভিড় দেখা যায় অন্যান্য স্টেশনেও। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

মেট্রো বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিককে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কেটে দেন। জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনও কথা বলতে পারব না। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য জনসংযোগ কর্মকর্তা আছে। আপনি তাকে ফোন করুন।’

পরে তার কথামতো ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৬) উপসচিব ও উপ প্রকল্প পরিচালক (গণসংযোগ) তরফদার মাহমুদুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। পরদিন থেকে সর্বসাধারণ মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন। এরপর গত ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। পরদিন উত্তরা হতে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয়। এরপর চালু হয়েছে আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন- শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার। ফলে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে অনেক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত