জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঘোষণা অনুযায়ী নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই মেট্রোরেলের ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল ভ্যাট। কিন্তু কারিগরি জটিলতায় বাড়তি ভাড়ায় আদায় করতে পারেনি মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রোরেলের টিকেট বিক্রির ভেন্ডিং মেশিনে পাঁচ টাকা ও তার কম পরিমাণ অর্থ গ্রহণ বা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু ভ্যাট যুক্ত হলে টিকেটের দামের সঙ্গে কিছু খুচরা অঙ্ক যুক্ত হবে, সেহেতু ওই অর্থ নেওয়া বা ভাংতি ফেরত দেওয়া নিয়েই সংকটে পড়েছে ডিএমটিসিএল।
তাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন সোমবার বাড়তি ভাড়া দিতে হয়নি যাত্রীদের।
কারিগরি জটিলতার কারণে নির্ধারিত দিনে ভ্যাট আরোপ না করা গেলেও, শিগগিরেই ভ্যাট যুক্ত হচ্ছে এই গণপরিবহণে। কী প্রক্রিয়ায় সেটি আদায় করা হবে তা জানা যাবে চলতি সপ্তাহের শেষ দিন। সেদিনই ডিএমটিসিএল, এনবিআরের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
নতুন অর্থবছরে মেট্রোরেলের টিকেটের দামের ওপর ভ্যাট নেওয়ার বিষয়ে গত ৪ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেখানে টিকেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ভ্যাট আরোপ করে এনবিআর, ভাড়া ঠিক করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাটের বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএল, এনবিআর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সেখানে মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর কীভাবে ভ্যাট যুক্ত হবে বা কোন প্রক্রিয়ায় ভ্যাট আদায় হবে, তা ঠিক করা হবে।
এ বিষয়ে সকাল সন্ধ্যার কথা হয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সঙ্গে। তিনি জানান, নতুন অর্থবছর থেকেই মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর ভ্যাট নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “মেট্রোরেল স্টেশনে থাকা ভেন্ডিং মেশিনে পাঁচ টাকা বা তার কম খুচরা টাকা নিতে বা দিতে পারে না। তাই ভেন্ডিং মেশিনের সফটওয়্যার ঠিক করতে হবে, এডজাস্ট করতে হবে। কারণ ওই মেশিন তো মানুষ না, ওইটা মেশিন। তাই সেটা ঠিক করতে হবে।”
সচিব বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকেই ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এনবিআরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মইনুল খানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
বর্তমানে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া ১০০ টাকা। ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হলে এই ভাড়া দাঁড়াবে ১১৫ টাকায়।
এছাড়া সর্বনিম্ম ভাড়া ২০ টাকার জায়গায় হবে ২৩ টাকা, ৪০ টাকার টিকেটের দাম হবে ৪৬ টাকা, ৬০ টাকার টিকেট হবে ৬৯ টাকা এবং ৮০ টাকার টিকেট হবে ৯২ টাকা।
২০২৩ সালে মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। এ বিষয় নিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়। তবে ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে।
পরে ২০২৩ সালের মে মাসে এনবিআরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের টিকেটের ওপর ভ্যাট মওকুফের কথা জানানো হয়।
রবিবার সেই সময়সীমা শেষ হলেও টিকেটের দামের ওপর ভ্যাট আরোপ হয়নি। সোমবার যাত্রীরা পূর্ব নির্ধারিত ভাড়াতেই মেট্রোরেলে চলাচল করতে পেরেছেন।