আশির দশকে ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল চালু করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল কলকাতা। শহরের বাসিন্দাদের স্বস্তি দিতে ও যোগাযোগব্যবস্থা দ্রুত করতে ভারতে তারাই প্রথম এই উদ্যোগ নেয়।
৪০ বছর পর আবার কলকাতার যোগাযোগব্যবস্থায় যুক্ত হলো নতুন মাইলফলক। এবার তারা নির্মাণ করেছে নদীগর্ভস্থ মেট্রো টানেল। এর মধ্য দিয়ে প্রথম নদীগর্ভস্থ মেট্রো পরিষেবার সূচনা হলো ভারতে।
ভারতের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে জানিয়েছে, ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি রুপি ব্যয়ে গঙ্গা নদীর পৃষ্ঠ থেকে ৩৩ মিটার নিচে নির্মাণ করা হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গ। ওই জোড়া সুড়ঙ্গ পথে চলাচল করবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো।
স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১০টার দিকে এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো টানেলের উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পশ্চিমবঙ্গসহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০ দিনের সফরের মধ্যেই কলকাতায় মেট্রো টানেল উদ্বোধন করলেন তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতা মেট্রোর পূর্ব-পশ্চিম করিডোরের হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড অংশ উদ্বোধন করা হয়েছে।
উদ্বোধনের পর স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসপ্ল্যানেড থেকে মেট্রোরেলে চড়ে হাওড়া ময়দানে যান নরেন্দ্র মোদি।
গঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে চলাচলের সময় এই মেট্রো টানেল চারটি স্টেশনে থামবে। সেগুলো হচ্ছে হাওড়া ময়দান, হাওড়া স্টেশন, মহাকরণ ও এসপ্ল্যানেড স্টেশন। সব মিলে ৪.৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে এটি।
গঙ্গার নিচে ৫২০ মিটার টানেল পেরোতে সময় লাগবে ৪৬ সেকেন্ড।
মেট্রো টানেলের হাওড়া স্টেশনটি মাটি থেকে ৩০ মিটার নিচে নির্মিত হয়েছে। এটি ভারতের সবচেয়ে গভীরতম মেট্রো স্টেশন।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই টানেলের সফল মহড়া হয়। সে বছরের শেষে এটি উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।
কলকাতার মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নদীপৃষ্ঠ থেকে ১৩ মিটার গভীরে পলিমাটির ভেতর দিয়ে গেছে মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গ। অর্থাৎ, সুড়ঙ্গ দুটি পানি নয়, নদীর নিচে পলিমাটির মধ্যে অবস্থিত।
যাত্রীরা যখন এই টানেল দিয়ে যাতায়াত করবে, তখন তাদের মাথার ওপর দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হবে।
এই করিডোর তথ্যপ্রযুক্তির কেন্দ্র সল্টলেক সেক্টর পাঁচসহ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।
মেট্রোরেলে চড়ে টানেল পাড়ি দেওয়ার সময় যাত্রীদের বিশেষ অনুভূতি দিতে নীল রঙের এলইডি আলো বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। নীল আলোর সঙ্গে মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক থাকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, পানিস্তরের ৩৫ মিটার নিচ দিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর কাজ চলছে। এর ফলে যাত্রীরা ৫-জি গতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে জানিয়েছে, কলকাতা মেট্রোর পূর্ব-পশ্চিম করিডোরের হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড অংশের উদ্বোধন বুধবার হলেও যাত্রীরা এখনোই এতে চড়তে পারবেন না। তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।