Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
পিক আওয়ারে ট্রেন ছাড়বে ৮ মিনিট পরপর

মেট্রোরেলে শিডিউল বিপর্যয় ঘটাচ্ছে ‘ঘুড়ি-ফানুস’

মেট্রোরেল। ফাইল ছবি
মেট্রোরেল। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

জরুরি কাজ থাকায় একটু দ্রুত কর্মস্থলে যেতে চেয়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শাহিনুল সজীব। যানজট এড়াতে বাসে না উঠে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেট্রোরেলে যাওয়ার। কিন্তু সিদ্ধান্ত যেন ঠিক সহায়তা করল না তাকে। কর্মস্থলে যেতে দেরিই হলো।

বৃহস্পতিবার সকালের এ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “শাহবাগে যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৭টায় মিরপুর-১০ স্টেশনে যাই। কিন্তু ট্রেন এলো ৮টা ১৩ মিনিটে। যাত্রীর অতিরিক্ত চাপে সেই ট্রেনে উঠতে পারিনি। পরের ট্রেন আসে আরও ১০ মিনিট পর। ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে অফিসে যেতে বেশ দেরি হয়েছে আমার।”

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে কিছু সময় শিডিউল অনুযায়ী রেল পরিচালনা করা যায়নি। বিদ্যুতের ঘাটতি ও সিগন্যাল সিস্টেমে ত্রুটিই এর কারণ। এর আগে বুধবারও রেলের তারে ঘুড়ি আটকে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল ঘণ্টাখানেক ব্যাহত হয়।

এভাবে নানা কারণে হুট করে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় সজীবের মতো চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার আকবর হোসেন নামে একজন তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “মেট্রোরেলের ওপর ভরসা করা দিনে দিনে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একেক দিন একেক রকম সমস্যা। আমার তো মেট্রোরেল স্টেশনে যেতে ভয় লাগে। আল্লাহ জানে সময় কতক্ষণ লাগে!

“বাংলাদেশে কোনও ভালো বিষয় ঠিকমতো কাজ করে না। খারাপ জিনিস টিকে থাকে যুগের পর যুগ। ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট মেট্রোরেল যেন ‘সাদা হাতি’ না হয়। অনেকে মনে করেন, মেট্রোরেল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সবসময় বিদেশি কোম্পানির হাতে থাকলেই ভালো হবে।”

২২ হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারীর ‘ঢাকা মেট্রোরেল কমিউনিটি’ গ্রুপে নাজমুল ইয়াসিন নামে একজন বুধবার লিখেছেন, “১.১৩ তে ট্রেন আসার কথা থাকলেও এখনো আসেনি। এই বিলম্বের কারণ কি কারো জানা আছে? ঘড়িতে একবার ৩ মিনিট আরেকবার ২ মিনিট করে দেখাচ্ছে। কিন্তু ট্রেনের দেখা নাই! কর্তৃপক্ষের অবশ্যই যাত্রীদের বলে দেওয়া উচিত যে বিলম্ব হবে বা এই কারণে ট্রেন বিলম্ব হচ্ছে। এই ভোগান্তির কোনো মানে নাই!!”

এভাবে ঘনঘন শিডিউল বিপর্যয়ের জন্য ঘুড়ি ও ফানুসকে দায়ী করেছে ডিএমটিসিএল। তাদের দাবি, মেট্রোরেলের আশপাশের এলাকায় ওড়ানো ঘুড়ি ও ফানুস বৈদ্যুতিক লাইনে পড়ার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ট্রেন চলাচল। তাই মেট্রোরেলের পাশে এক কিলোমিটার এলাকায় ঘুড়ি ওড়ানোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও হাজার হাজার ঘুড়ি নাটাই জব্দ করা হয়েছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে অনুরোধ জানিয়ে ডিএমটিসিএল সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, উত্তরা উত্তর হতে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে মেট্রোট্রেন চলাচল করে।

ঘুড়ি, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ইত্যাদি বা অনুরূপ কোনও বস্তু ওড়ানো হলে এর অবশিষ্টাংশ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক লাইনে জড়িয়ে যে কোনও মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুটি ঘুড়ি ও ঘুড়ির সুতা পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত অংশের বৈদ্যুতিক লাইনে আটকে থাকায় নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী মেট্রো চলাচল ব্যাহত হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মেট্রোরেলের রুট অ্যালাইনমেন্ট ও পার্শ্ববর্তী এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ঘুড়ি, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ইত্যাদি বা অনুরূপ কোনও বস্তু যাতে ওড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনস্বার্থে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

ঘুড়ি আর ফানুসের কারণে মেট্রোরেল চলাচল নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছেন জানিয়ে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক বলেন, “মেট্রোরেল এলাকায় ঘুড়ি ও ফানুস উড়ালে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই আমাদের।

“মেট্রোরেলের তারের সঙ্গে যখন কোনও ঘুড়ি বা ফানুস জড়িয়ে যায় তখন সেটি অপসারণে পুরো বৈদুতিক লাইন বন্ধ করে দিতে হয়। কারণ প্রায় ১৫ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ না করে সেগুলো অপসারণের সুযোগ নেই। উচ্চভোল্টের এই বৈদ্যুতিক লাইনের সংস্পর্শে আসলে একজন মানুষ কঙ্কাল হয়ে যাবে। এ কারণে আমাদের শিডিউল ঠিক রাখতে সমস্যা হচ্ছে।”

ডিএমপি ও এমআরটি পুলিশকে ঘুড়ি ওড়ানোর বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বুধবারও অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করা হয়েছে। আর ৬ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘুড়ি তৈরির উৎস চিহ্নিত করে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ঘুড়ি ও নাটাই জব্দ করা হয়েছে।”

মেট্রোরেলের নতুন শিডিউল

যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার মাঝের সময় ১০ মিনিট থেকে কমিয়ে ৮ মিনিট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের এমডি এমএএন ছিদ্দিক। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সময় কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে মেট্রোরেল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রতিদিন ১৫২ বার ট্রেন যাতায়াত করছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সংখ্যা আরও ২৬টি বাড়বে। ফলে ট্রেনের ট্রিপের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭৮ টিতে।”

নতুন সূচি অনুযায়ী, মেট্রোরেলের উত্তরা স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিনটা ট্রেন চলবে। এটা স্পেশাল অফপিক আওয়ায়। এরপর ৭টা ৩১ মিনিট থেকে ১১টা ৪৮ পর্যন্ত পিক আওয়ারে ৮ মিনিট অন্তর ট্রেন চলবে। এরপর ১১টা ৪৯ মিনিট থেকে ৩টা ১১ মিনিট অফ পিক আওয়ারে আগের মতোই ১২ মিনিট সময় থাকবে। বিকাল ৩টা ১২ মিনিট থেকে ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ারে ৮ মিনিট পর ট্রেন চলবে।

অন্যদিকে মতিঝিল স্টেশনে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তিনটা ট্রেন চলবে। এরপর ৮টা থেকে ১২টা ৮ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ার। ১২টা ৯ মিনিট থেকে ৩টা ৫২ পর্যন্ত অফ পিক আওয়ার। ৩টা ৫২ থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ার হিসেবে ট্রেন চলাচল করবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত