পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। এই মার্কিন পপ সম্রাট জীবদ্দশায় এবং মারা যাওয়ার পরও কিংবদন্তি হয়ে আছেন।
১৯৫৮ সালের ২৯ অগাস্ট এই তারকা শিল্পীর জন্ম। সেই হিসাবে এবার তার ৬৬তম জন্মবার্ষিকী। ২০০৯ সালে ৫০ বছর বয়সে মারা যান এই তারকা।
গোটা বিশ্বে মাইকেল জ্যাকসনের ৪০ কোটির বেশি রেকর্ড বিক্রির তথ্য জানাচ্ছে বিবিসি।
মাইকেল জ্যাকসনের ‘থ্রিলার’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বলছে, এখনও বিক্রির তালিকায় সেরা জায়গাটি ধরে রেখেছে এই অ্যালবাম।
ধারণা করা হয়, এই তারকার সংগীত সম্পদের মূল্য ১২০ কোটি ডলার। এই বছর ফেব্রুয়ারি নাগাদ সনি মিউজিক গ্রুপ থেকে মাইকেল জ্যাকসনের অর্ধেক রেকর্ড কিনে নিতে প্রায় ৬০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।
গান তো বটেই, মঞ্চে অপার্থিব নৃত্যের সঙ্গে পোশাক ও সজ্জা নিয়েও মাইকেল জ্যাকসন এখনও অফুরান এক আলাপ।
ফ্যাশন ফিয়েস্তা মাইকেল জ্যাকসনের সাজসজ্জা ও জ্যাকেট প্রীতি নিয়ে ভক্তদের জন্য প্রতিবেদন সাজিয়েছে হিন্দুস্থান টাইমস।
মোটো জ্যাকেট
১৯৮৭ সালে ঝড় তুলেছিল মাইকেল জ্যাকসনের অ্যালবাম ‘ব্যাড’। গান আর রেকর্ডিংয়ের মানে অনন্য তো ছিলই, ওই মিউজিক ভিডিওতে মাইকেল জ্যাকসনের গায়ের জ্যাকেটও আলোচনার বাইরে থাকেনি।
চকচকে চেইন বসানো মোটো জ্যাকেটের সঙ্গে জিনস, পায়ে বুট জুতা পরা মাইকেল জ্যাকসন ভক্তদের চোখে বিশেষ জায়গা করে নিলেন।
‘থ্রিলার’ অ্যালবামে লাল রঙের চামড়ার জ্যাকেট দেখার পর সবাই যে কোনো মূল্যে ওইরকম একটি জ্যাকেট নিজের করে পেতে পাগল হয়ে উঠেছিল।
মটরবাইক প্রতিযোগীদের গায়ে দিতে দেখা যায় এমন মোটোক্রস আজকে জেন-জি ফ্যাশনেও চাহিদার তুঙ্গে। ফরাসি-স্প্যানিশ ব্র্যান্ড ‘ব্যালেন্সিয়াগা’ এবং ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার আলেকজান্ডার ম্যাককুইন গত কয়েক বছর ধরে এই ধারার দিকেই ঝুঁকেছে।
সাদা গ্লাভস
মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে সঙ্গে তার হাতের সাদা গ্লাভসও কিংবদন্তি হয়ে ওঠেছিল। ১৯৮৩ সালে ‘বিলি জিন’ গানের পরিবেশনায় এক হাতে এই সাদা গ্লাভস পরেছিলেন এই পপ তারকা।
সাদা গ্লাভসে বসানো ছিল ১২০০ স্বরোভস্কি ব্র্যান্ডের ক্রিস্টাল। এই গ্লাভস বানিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসনের ফ্যাশন ডিজাইনার বিল হুইটেন।
মাইকেল জ্যাকসনের ফ্যাশন নিরীক্ষা কখনই থেমে থাকেনি। জ্যাকেটে রাইনস্টোন বসাতেন এমনভাবে যেন সবচেয়ে পেছনের দর্শকের চোখেও বারবার ঝিলিক দিয়ে ওঠেন এই পপ সম্রাট।
সাধারণ ধারণাকেও ফ্যাশনে জনপ্রিয় করে তোলার জাদু জানতেন এমজে অর্থ্যাৎ মাইকেল জ্যাকসন। ’থ্রিলার’ মিউজিক ভিডিওতে এমজে যখন ‘ভার্সিটি লেটারম্যান জ্যাকেট’ গায়ে চড়ালেন তখন অনুসারীদের মধ্যেও সেই হিড়িক পড়ে গেলো।
এমজের পরা লাল এবং হলুদ রঙের সেই জ্যাকেটের আবেদন এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে ফ্যাশন জগতে। মার্কিন গায়িকা রিয়ানা মাঝে মাঝেই লেটারম্যান জ্যাকেট গায়ে মঞ্চে ওঠেন।
ক্রপ প্যান্ট
ফ্যাশন জগতে গোড়ালি পর্যন্ত প্যান্ট মানে ক্রপ প্যান্ট পরার ফ্যাশন ফিরিয়ে আনেন মাইকেল জ্যাকসন। ১৯৮৩ সালে ‘মোটাউন ২৫তম অ্যানিভার্সিরি’ উদযাপনে প্রথম মুনওয়াক করেছিলেন এই তারকা। ওই সময় তার পরনে ছিল ক্রপ প্যান্ট, ঝলমলে মোজা এবং পেনি লোফার জুতা।
এসব নিয়েই মুনওয়াক এক ইতিহাস হয়ে উঠল।
এমজের ফ্যাশন জাদু নিয়ে গ্রামি মিউজিয়ামস মাইকেল জ্যাকসনের কিউরেটর কেন লুফটিগ ভিসটে বলেছিলেন, “এতো নিখুঁত সাজপোশাক বেছে নেওয়ার পেছনে কারণ ছিল, তার নাচ যেন পেছনের দর্শকও দেখতে পায়।
“আলো পড়লে ক্রিস্টাল জ্বলজ্বল করতো। সাদা মোজায় তার নাচ, পায়ের কারুকাজ আরও ফুটে উঠতো। তিনি চাইতেন, দর্শক যেন তার নাচ পুরোটা দেখতে পায়।”
মিলিটারি জ্যাকেট
মাইকেল জ্যাকসন আর মিলিটারি জ্যাকেট মিলিমিশে একাকার হয়ে আছে ভক্তদের কাছে। এই জ্যাকেটের নকশা করেন এমজের ঘনিষ্ট বন্ধু মাইকেল বুশ।
চওড়া কাঁধ, বিচিত্র প্রতীক আর পোক্ত সেলাইয়ের এই জ্যাকেট পরা মাইকেল জ্যাকসন মঞ্চে আরও অনবদ্য হয়ে উঠতেন।
জেন জিরাও এই মিলিটারি জ্যাকেট গায়ে দিয়ে নিজেকে সবার মাঝে চোখে পড়ার মতো একজন করে নিচ্ছে। কেউ বলুন আর নাই বলুক, ফ্যাশন বলতে এখনও মাইকেল জ্যাকসনকেই বেছে নিতে হচ্ছে।