দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের তিন মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি হিসাব ও জমার পরিমাণ যেমন বেড়েছিল, তেমনি ভোটের পর গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে তা কমেছে।
চলতি বছরের এই তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি জমা আছে এমন হিসাব সংখ্যা কমে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টিতে নেমে এসেছে। এসময়ে এই হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ৪২ শতাংশ। তবে গত ডিসেম্বর শেষে এই হার ছিল ৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের হিসাব বলছে, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। তবে চলতি বছরের মার্চ শেষের হিসাব বলছে, ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব কমেছে ১ হাজার ১৮টি।
গত ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি হিসাবধারীদের জমার পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। তবে মার্চ শেষে কোটিপতি হিসাবে জমার পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ১১ কোটি টাকা।
ভোটের আগে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারাটি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। ওই তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব ও জমা দুটোই বেড়েছিল। ভোটের পর কোটিপতিদের হিসাব সংখ্যা ও জমার পরিমাণ দুটোই কমে গেছে।
অর্থনীতির বিশ্লেষকদের মতে, গত ৭ জানুয়ারির ভোট ঘিরে দেশে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, সে কারণে স্বাভাবিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ওই সময় অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ না করে টাকা ব্যাংকে জমা করে রাখেন।
নির্বাচনের পর অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় অনেকেই আবার টাকা বিনিয়োগ শুরু করেছেন। একারণে গত জানুয়ারি-মার্চে ব্যাংকে কোটিপতিদের অনেকেই টাকা তুলে নেওয়ায় জমা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা আমানত থাকা এমন হিসাব ছিল ৯১ হাজার ৬২৩টি। যেখানে জমা ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা।
পাঁচ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা জমা হিসাব ছিল ১২ হাজার ৪৪৬টি। এসব হিসাবে জমা ছিল ৮৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।
গত মার্চ প্রান্তিকে ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ৪ হাজার ৩৯৬টি, যেখানে জমা ছিল ৫৪ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
একই সময় ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ১ হাজার ৯৬১টি, যেখানে জমা ছিল ৩৫ লাখ ১৩৫ কোটি টাকা।
গত মার্চ শেষে ব্যাংকে ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২২১, জমার পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ৮৭৫টি হিসাব ছিল, জামার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
এছাড়া ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০১টি হিসাব ছিল, যাতে জমা ছিল ১৬ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটি টাকা জমা থাকা হিসাব ৩৬০টি, যাতে জমা ছিল ১৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৬৮১টি, যেখানে গত মার্চ পযন্ত জমা ছিল ৩১ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৬টি, যাতে জমা ছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বরে মোট আমানতে কোটিপতিদের অংশগ্রহণ ছিল ৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তখন ব্যাংকে মোট আমানত ছিল ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। মার্চে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ বেড়ে হয় ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে সামগ্রিকভাবে আলোচিত তিন মাসে ব্যাংকে আমানত বাড়লেও কোটিপতিদের অংশ কমেছে।