Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

নিজেকে ‘অটো চয়েজ’ মানেন না মিরাজ

বাংলাদেশ জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: টুইটার
বাংলাদেশ জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: টুইটার
Picture of শিহাব উদ্দিন

শিহাব উদ্দিন

[publishpress_authors_box]

বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করার কথা ছিল বিসিবির। আগে থেকেই লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ আলোচনায় ছিলেন। অথচ দুজনের একজনও দায়িত্ব পাননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজে নেতৃত্বের ব্যাটন দেওয়া হয় নাজমুল হোসেন শান্ত’র হাতে। তিনিও লম্বা সময়ের জন্য নন। বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক কে আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনও জানায়নি বিসিবি। সকাল সন্ধ্যাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিরাজ জানান জাতীয় দলের নেতৃত্ব নিয়ে নিজের চিন্তা, বিশ্বকাপ হতাশা ও ভাবিষ্যৎ ভাবনা। 

প্রশ্ন : ওয়ানডে বিশ্বকাপে যে প্রত্যাশা ছিল তা নিশ্চয়ই পূরণ হয়নি?

মেহেদী হাসান মিরাজ : ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। বিশ্বকাপের আগে থেকে আমাদের প্রস্তুতি বা যেটাই বলেন খুব ভালো ছিল। কিন্তু আমরা মূল টুর্নামেন্টে গিয়ে সেভাবে ভালো করতে পারিনি। সেদিক থেকে তো একটা খারাপ লাগা থাকেই। পুরো দলেরই একটু মন খারাপ ছিল। একটা জিনিস যে বিশ্বকাপের ঠিক আগে এমন কিছু হয়ে গেল যা আপনারা সবাই জানেন, অনেক সময় ওই ব্যাপারগুলো দলের মানসিকতা একদিক থেকে অন্যদিকে সরিয়ে দেয়। এটা টুর্নামেন্টে খারাপ করার জন্য একটা কারণ হতে পারে।

প্রশ্ন : হতাশার হলেও এই বিশ্বকাপ থেকে আপনি কী নিতে পেরেছেন?

মিরাজ : বিশ্বকাপে নিজের একটা উন্নতি হয়েছে। যেমন আমাকে বেশ কয়েক পজিশনে ব্যাটিং করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সেসব সুযোগ যদি আমি কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে দল ও নিজের জন্য ভালো হতো। তবে বড় ইনিংস না খেলায় নিজের মধ্যে সুযোগ কাজে না লাগানোর ঘাটতি দেখছি। যদিও ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার যে বিষয় থাকে, আমি বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব। আবার এরকম সুযোগ পেলে আমি ভালো করার চেষ্টা করবো। কারণ আগেও কিন্তু আমি বিভিন্ন পজিশনে খেলেছিলাম। কিছু সময় আমি সফলও হয়েছি।

প্রশ্ন : বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হোম ও অ্যাওয়েতে বাংলাদেশ কয়েকটা ম্যাচ জিতেছে। এই সাফল্যে বিশ্বকাপ হতাশা ঢাকবে?

মিরাজ : বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। ওটার খারাপ করা কিন্তু অন্য কিছু দিয়ে ঢাকা যায় না। আমরা এমনিতে বিশ্বকাপে কখনও সেমিফাইনাল খেলিনি। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র ছিল। চার বছর পরপর এই টুর্নামেন্ট হয় বলে একটু বাড়তি আশা থাকে। এখন তো পেছনে পরে থাকার কারণ নেই। সামনে তাকাতেই হবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে আমরা দেশে ও দেশের বাইরে গিয়ে জিতলাম, এটা এখন আমাদের বিশ্বকাপ হতাশা ভুলে সামনে তাকাতে সাহায্য করবে।

প্রশ্ন : দলে অভিজ্ঞতার কমতি ছিল। তবুও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চমৎকার খেলেছে বাংলাদেশ…

মিরাজ : নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আমরা কিন্তু আগে কখনও জিতিনি। আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়েও খেলেও সাফল্য আসেনি। দলে কারা আছে বা নেই, তা নয়। এটা ওই কন্ডিশনে বারবার খেলার ফল। আমরা শেষ ৫-৬ বছরে ৫-৬ বার নিউজিল্যান্ডে খেলেছি। আমি নিজেও খেলেছি। নিউজিল্যান্ডে বারবার যাওয়ার কারণে আমরা ওই কন্ডিশন সম্পর্কে জানি এবং ভালো করতে পেরেছি। অস্ট্রেলিয়ায় ৫-৭ বছর পরপর একবার গেলে আমরা কিন্তু ভালো করতে পারব না।

প্রশ্ন : এতদিন যারা আইকন ছিলেন, বাংলাদেশ দলে এখন তারা অনিয়মিত। লিটন-তাসকিন-মিরাজরা এখন অভিজ্ঞ। তাদের জায়গাটা আপনারা নিতে পারবেন?

মিরাজ : আমাদের বড় ভাইরা আমাদেরকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব এই অবস্থানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমি যুব বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেছি। এরপরের ব্যাচ দেখেন বিশ্বকাপ জিতেছে। তো এটা হবেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হয় একটা দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা চাই তামিম-সাকিব-মুশফিক ভাইদের মতো আমাদের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে।

প্রশ্ন : বিশ্বকাপের আগে দুসরা শিখছিলেন। সেটার কী হলো?

মিরাজ : হ্যাঁ, আমি দুসরা শেখার চেষ্টা করেছিলাম বিশ্বকাপের আগে। কিন্তু এক-দুদিন অনুশীলনের পর দেখলাম আমার যে বোলিং অ্যাকশন সেটা দিয়ে দুসরা করাটা কঠিন। আমাকে বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন করতে হতো যা সম্ভব না। তাই আমি নিজের স্বাভাবিক অ্যাকশনটাই ধরে রেখেছি। দুসরা করার আর চেষ্টা করিনি।

প্রশ্ন : নিউজিল্যান্ডে দেখলাম হেনরি নিকোলস আপনার জার্সি নিলেন। সচরাচর বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের জার্সি অন্য দলের কেউ চায় না। এই নতুনত্বটা আপনার কাছে কেমন লেগেছে?

মিরাজ : ব্যাপারটা সত্যিই দারুণ ছিল। নিকোলস আমাকে খুব পছন্দ করে। ওর বড় ভাই মিডিয়া ম্যানেজার, তার সঙ্গেও আমার চমৎকার সম্পর্ক। সেদিন খেলার পর নিকোলস বলেছিল, ‘আমরা দুই ভাই, তুমি আমাদের তৃতীয় ভাই। তোমার একটা জার্সি দাও – আমি রাখব।’ তো আমি গায়ের জার্সি খুলে দেইনি, একদম নতুন এনে দিয়েছি।

প্রশ্ন : বিশ্বকাপের পর নতুন অধিনায়ক কে হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। আপনি তো আগেই থেকেই তালিকায় ছিলেন। তখন কি মনে করেছিলেন নেতৃত্বটা এবার আসতে পারে?

মিরাজ : জাতীয় দলের নেতৃত্ব পাবো, এমন কিছু ভাবিনি আমি। এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি বোর্ড যদি মনে করে আমি অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য, তখন তারা সুযোগ দিবে। কিন্তু আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করিনি যে নেতৃত্ব পাব। সেটা বাইরে যত আলোচনাই হোক, আমি নিজে এমনটা ভাবিনি। তাছাড়া নেতৃত্ব দেওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পারফর্ম করা। আমি অধিনায়ক হলাম কিন্তু পারফর্ম করতে পারলাম না, তাহলে তো আমি সফল না। দিনশেষে ভালো অধিনায়ক ও পারফরমার হওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : আপনি তো নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি দল থেকেও বাদ পড়েছিলেন। নেতৃত্ব আলোচনা থেকে দল থেকে বাদ পড়ার বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

মিরাজ : দল থেকে বাদ পড়া…আসলে অটো চয়েজ বলতে তো কিছু নেই। টি-টোয়েন্টি এমন একটা খেলা যে সবসময় আপনাকে ভালো করতে হবে। কিছু সময় আসে যখন টিম কম্বিনেশনের কারণে আপনাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। নিউজিল্যান্ডে তেমন কিছুই হয়েছিল। আমি নিজেকে অটো চয়েজ হিসেবে দেখি না। আমি সবসময় দলের প্রয়োজনের যেকোনও অবস্থার জন্য তৈরি। এটা সবাই জানে। আমি দলের জন্য ওপেন করেছি আবার আট নম্বরেও নেমেছি। প্রয়োজনে ডাগআউটে বসতেও আমার অসুবিধা নেই। আমি যেকোনও কিছুর জন্যই প্রস্তুত আছি, এটা শুধু আমি না, সবাইকেই প্রস্তুত থাকতে হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত