Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

একাত্তর ভুলে গেলে চলবে না : মির্জা ফখরুল

fakhrul
[publishpress_authors_box]

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে গেলে চলবে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানসহ বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি কিছুক্ষণ আগে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম যে, এখন একটা প্রবণতা, জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একাত্তর একটু পেছনে রাখা।

“আমার মনে হয়, এটা আরেকটা ষড়যন্ত্রের অংশ, দেশের মূল ইতিহাস থেকে জাতিকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। যেমন ‘৪৭ সালের পার্টিসনকে অনেকে বলেন যে, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”

তিনি বলেন, “আমাদেরকে মূল যে ইতিহাস, আজকে এই স্বাধীন বাংলাদেশ, আজকে ইতিহাস নিয়ে এসে আমরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সেই ইতিহাস যেন বিকৃত না করি। গত ১৫ বছর ধরে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। ঠিক তেমনি করে এখন যাতে ইতিহাস বিকৃত না হয় সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”

ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‍উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর শনিবার বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন সকাল ১১টায় বিএনপির নেতৃবৃন্দ নেতাকর্মীদের নিয়ে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিকে মেধাশূন্য করতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্মমভাবে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

বস্তুত মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়ই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলেও বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। 

‘আপনাদের সামনে অনেক কাজ’

দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেক কাজ করতে হবে বলে মনে করেন দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আপনাদের সামনে অনেক কাজ। অনেকে মনে করেছেন যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে, কাজ শেষ হয়ে গেছে। না। কিছুক্ষণ আগে আমাদের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলছিলেন যে, আমাদের এই আন্দোলন চলবে নির্বাচন পর্যন্ত।”

“না, না। এই নির্বাচনের পরে আরও বহু বহু দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা গণতন্ত্রকে একটা সংস্কৃতিতে পরিণত করতে পারব, কালচারে পরিণত করতে পারব।”

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “আসুন আজকে এই দিনে আমরা শপথ নেই- যারা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এই শপথ গ্রহণ করি যে, আমরা আমাদের গড়ে তুলব একটি উপযোগী রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে, গণতন্ত্রের একজন কর্মী হিসেবে, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে।”

“সেই সঙ্গে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের কর্মী হিসেবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কর্মী হিসেবে। আমরা যেন আমাদেরকে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সত্যিকার কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।”

‘এই সময়টা সবচাইতে কঠিন’

বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দলটির মহাসচিব বলেন, “এই সময়টা সবচাইতে কঠিন সময়। আপনার একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয় আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিক পা দিতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসসহ বিশেষ বিশেষ দিবস সম্পর্কে নেতাকর্মীদের জানা-বোঝার চেষ্টা করার অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমার অনুরোধ থাকবে… এই দিবসগুলো আপনারা অবহেলা করবেন না… জানার চেষ্টা করবেন। অনেকে জানেই না কী হয়েছিল।

“ওই দিন কি তালি মারার দিবস, না তালি মারার দিবস না? ওই দিন কি মিলাদ করার দিবস, না খিচুড়ি খাওয়ার দিবস? আমাদের দেশের সবচাইতে বরণ্যে ব্যক্তিদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে ভালো শিক্ষকদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।”

তিনি বলেন, ‘‘মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের তুলে নিয়ে গেছে এই যে ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে তুলে নিয়ে যেত, যেমন আমাদের গুম করত, ঠিক ওইভাবে তাদের (শহীদ বুদ্ধিজীবীদের) তুলে নিয়ে গেছে। বাসা থেকে নেওয়ার সময়ে বলছিল- এই কিছুক্ষণ পরে চলে আসবে তো। এভাবে নিয়ে গেছে। নেওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। “রায়েরবাজারে তাদের হাত-পা বাঁধা মরদেহ পাওয়া গেছে; মহিলা-পুরুষ সকলের। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীদের কেন প্রাণটা দিতে হলো।”

আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘর’ নামের যে গোপন বন্দিশালায় রাখা হতো সে প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই আয়নাঘরের মতো তখনও ঘর ছিল। এই আয়নাঘরে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছেলেদের, কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে?

“একটাই উদ্দেশ্য ছিল- তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেওয়া, তাদেরকে শেষ করা, তাদেরকে ধবংস করা। কেন? একজন ব্যক্তিকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করা… হাসিনার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে হবে সেজন্য আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়া হতো। তাই না?”

‘গণতন্ত্র মানে এই নয়…’

গণতন্ত্র কথার কথা নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা একটা কালচার- এটা একটা সংস্কৃতি। আপনি-আমি কীভাবে কথা বলব, আমি আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে কেমন কথা বলব, আমার রাজনীতির প্রতিপক্ষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব- সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে গণতন্ত্রের ভেতর দিয়ে শিখতে হবে।”

“গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আওয়ামী লীগ করলে তাকে গলা কেটে ফেলো, আর বিএনপি করলে তার মুণ্ড ছেদ করো। তাহলে সেটা কিন্তু গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা। তোমার কথা বলার অধিকার আছে, আমার বিরুদ্ধেও কথা বলার অধিকার আছে। আমি সেটাকে রক্ষা করব- এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।”

‘প্রতিটি মুহূর্ত সর্তক থাকা চাই’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রতিটি মুহূর্ত এখন আমাদেরকে সর্তকতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমাদের প্রতিটি কথা আমাদেরকে মেপে কথা বলা দরকার। আমরা এমন কোনও কথা বলব না যে, আমাদের এই যে বিজয়কে নষ্ট করে দেয়, অর্জনকে বিনষ্ট করে দেয়।

“আমাদের দেশের ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে সে দ্রুত কাজ করছে। সে লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটা মিটিংও করেছে এরমধ্যে ডিজিটালি।”

এসময় ফেইসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেখবেন যে, তারা (আওয়ামী লীগ) অনেক অপপ্রচার করছে, মিথ্যাচার করছে যেগুলো বাংলাদেশের জন্য, এই বিপ্লবের জন্য অত্যন্ত উল্টো কথা। তাই আপনাদেরকে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভেতর দিয়ে আপনাদেরকে কথা মধ্য দিয়ে জবাব দিতে হবে।”

তথ্য উপদেষ্টার সমালোচনা

রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে বলে যে বক্তব্য তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম দিয়েছেন সভায় তার সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “একজন উপদেষ্টা যখন এই কথা বলেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে এটা অত্যন্ত ঘোরতর অভিযোগ। আমি তীব্রভাবে এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং আমি মনে করি যে, এই ধরনের উক্তি তার প্রত্যাহার করা উচিত।”

রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদেরকে সহযোগিতা করছে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। সেখানে আপনি যদি বলেন, এটা ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে।

“আমরা হাজার বার বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা বলেছি, এই সরকার হওয়া ব্যর্থ হওয়া মানে জনগণ ব্যর্থ হয়ে যাবে, আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। তাহলে এইরকম কথা কেন বলবেন আপনি?”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত