Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সাভারে সেই স্বপনের আরেক বাড়ির মেঝে খুঁড়ে মিলল মানুষের হাড়গোড়

মঙ্গলবার সাভারের কুল্লা ইউনিয়ন থেকে স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
মঙ্গলবার সাভারের কুল্লা ইউনিয়ন থেকে স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
[publishpress_authors_box]

ঢাকার সাভারে পাঁচদিন আগে এক নারীর মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার হয়েছিল যার বাড়ির পাশ থেকে, সেই স্বপন মিয়ার আরেকটি বাড়ির মেঝে খুঁড়ে এবার পাওয়া গেল মানুষের হাড়গোড়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাভারের আনন্দপুর মহল্লার সিটিলেন এলাকায় স্বপন মিয়ার বাড়ির নিচতলার মেঝে খুঁড়ে মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি ও হাড়গোড় প্রায় ১৪ মাস আগে নিখোঁজ হওয়া পোশাক শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন টোটনের।

পৌর এলাকার ইমান্দিপুর মহল্লার সালামত মিয়ার ছেলে টোটন (২৭) গত বছরের ১৯ এপ্রিল নিখোঁজ হন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

সাভারের খনিজনগরে বাড়ির পাশ থেকে মাটিচাপা দেওয়া নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে পিস্তল, মাদকসহ সাভারের কুল্লা ইউনিয়ন থেকে স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আনন্দপুর মহল্লার সিটিলেন এলাকায় তার আরেক বাড়ি থেকে হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার স্বপন মিয়া (৩২) সাভার পৌর এলাকার ইমান্দিপুর মহল্লার শাহজাহানের ছেলে। সাভারের বিভিন্ন এলাকায় তার কয়েকটি বাড়ি রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে, পাঁচ দিনের ব্যবধানে স্বপন মিয়ার দুটি বাড়ি থেকে এক নারীর লাশ ও আরেকজনের দেহাবশেষ উদ্ধারের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন।

ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব জানান, ১৩ মে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি স্বপন মিয়ার বিরুলিয়ার খনিজনগর বাড়ি থেকে ৩০০টি ইয়াবা বড়িসহ বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হামিদ মিয়া ও স্বপনের স্ত্রী পপি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হামিদ মিয়া ও পপি আক্তারের গ্রেপ্তারে স্বপনের প্রতিবেশী সীমা বেগম নামের এক নারী সহায়তা করেছিলেন জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তার গ্রেপ্তার হওয়ার ১৯ দিন পর গত ২ জুন সীমা বেগম নিখোঁজ হন। পরে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামে স্বপনের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ জুন স্বপনের খনিজনগরের বাড়ির পাশ থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় সীমার লাশ উদ্ধার করা হয়।

রিয়াজ উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার সকালে সাভারের কুল্লা ইউনিয়ন থেকে স্বপনকে একটি পিস্তল, ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে স্বপনকে নিয়ে সিটিলেন এলাকায় তার বাড়ির দেখিয়ে দেওয়া স্থানে প্রায় ৭ ফুট গভীরে খুঁড়ে মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, প্রায় ১৪ মাস আগে নিখোঁজ তোফাজ্জল হোসেনের বোন পূর্ণিমা বেগম বলেন, “স্বপন আগে তার সিটিলেন এলাকার বাড়িতে থাকত। আমার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি ওই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তখন বিষয়টি পুলিশকে বারবার জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

মাদক কারবারি স্বপনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় পোশাক শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেনের বলে শনাক্ত করেছেন নিহতের চাচা উসমান গনি।

তিনি বলেন, “গত বছরের ১৯ এপ্রিল আমার ভাতিজা তোফাজ্জল নিখোঁজ হন। এর আগের দিন মাদক কারবারি স্বপন মিয়া ও তার সহযোগীদের সঙ্গে তোফাজ্জলের ঝগড়া হয়েছিল। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ।

“অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ওই বছরের ২১ এপ্রিল সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এর এক বছরের বেশি সময় পর মঙ্গলবার স্বপনের বাড়ি থেকে তোফাজ্জলের হাড়গোড় উদ্ধার করল পুলিশ।”

হাড়গোড়ের পাশ থেকে টোটনের জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েই বলছি, এসব কাপড় আমার ভাতিজার।”

সীমা বেগম ও তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান খান বলেন, “সীমা বেগম হত্যার ঘটনায় প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে মাদক কারবারি স্বপনের সহযোগী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সীমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বপনের নেতৃত্বে সাইফুল, রেজাউল, তাইরান ও আসিফ মিলে সীমাকে হত্যা করে।”

স্বপনকে সিরিয়াল কিলার হিসেবে অভিহিত করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “স্বপনকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার ঘরের মেঝে খুঁড়ে হাড়গোড় ও খুলি উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে থাকা জামা দেখে স্বজনরা সেগুলো তোফাজ্জল হোসেনের বলে শনাক্ত করেছেন। তারপরও ডিএনএ পরীক্ষা হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত