Beta
মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

সুনামগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দুদের বাড়ি ভাংচুর

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়ি
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়ি
[publishpress_authors_box]

ফেইসবুকে এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি, মন্দির ও দোকান ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরে হামলা-লুটপাট এবং দোকান-বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগেরও অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কোনও ঘটনার খবর তাদের কাছে নেই।

পুলিশ বলছে, যে যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করা হয় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। উত্তেজিত জনতা ওই যুবক ও তার কিছু আত্মীয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। বাড়িঘর ও দোকানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কোনও ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রথমে দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের মংলারগাঁও গ্রামে ও পরে দোয়ারাবাজার সদরে হামলার এসব ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এরশাদুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে জানান, মংলারগাঁও গ্রামের এক যুবকের ফেইসবুকে এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়লে ঘটনা সামাল দিতে ওই যুবককে আটক করে পুলিশ।

তিনি বলেন, “উত্তেজিত জনতা এসময় বেশ কয়েকটি টিনশেডের বাড়িঘর ভাংচুর করে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কোনও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি।”

দোয়ারাবাজার কেন্দ্রীয় লোকনাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র রায় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ফেইসবুকে আরেকজনের একাউন্টে ধর্ম অবমাননা করে কমেন্টস করার অভিযোগে মংলারগাঁও গ্রামের এক ছেলেকে পুলিশ আটক করে বলে আমরা জানতে পারি। পরে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা এই গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর,  ৩-৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে পাশ্ববর্তী ননীগাঁও গ্রামেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে লুটপাট হয়।”

খোকন রায় বলেন, “উত্তেজিত জনতা দোয়ারাবাজার কেন্দ্রীয় লোকনাথ মন্দির লুটপাট ও ভাংচুর করেছে। এছাড়া দোয়ারাবাজার সদরের দুই শতাধিক দোকানপাট, শতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও ১০-১২টি বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে। স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, গুরুদাস দেবের বাড়ির মন্দিরও ভাংচুর করা হয়েছে।”

দোয়ারাবাজার কেন্দ্রীয় লোকনাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত ১ টার দিকে যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বুধবার সকাল থেকে পুলিশ সদস্যরা লোকনাথ মন্দিরে অবস্থান করছেন। এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।   

সুরমা নদীর একপাড়ে মংলারগাঁও। আরেক পাড়ে ঢোলপুষি। ঢোলপুষি গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, মংলারগাঁও গ্রামের হিন্দুদের বাড়ি-দোকানপাটে হামলা, লুটপাটের খবর স্বজনদের কাছ থেকে তারা জেনেছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কয়েকটি গ্রামের কিছু উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে ওই যুবকের শাস্তি দাবি করে। এসময় বিক্ষুব্ধদের একটি অংশ কয়েকটি বাড়ি, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। রাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার তনু সকাল সন্ধ্যাকে জানান, মংলারগাঁওয়ে কয়েকটি টিনশেডের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবক পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলাকা টহলে রয়েছে।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ফেইসবুকে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে ঘটনটি ঘটেছে। যেহেতু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে, উত্তেজিত জনতা ওই যুবকের বাড়ি গিয়েছিল। আমরা তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। আটক যুবকের বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

মন্দির-দোকান ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেরকম ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। ওই যুবক ও তার কিছু আত্মীয়ের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। উত্তেজিত জনতা কিছু বন্ধ দোকানপাটে হামলা করেছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত