Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

মব জাস্টিস : কঠোর বার্তা সরকারের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াল লিখন।
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াল লিখন।
[publishpress_authors_box]

সরকার পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের স্থানে ঘটা ‘মব জাস্টিসে’র বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার।

সবশেষ ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তিকে হত্যার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

কোনও ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা মব জাস্টিস বরদাশত করা হবে না বলে সতর্ক করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, “এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সরকার তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে এবং বিচার নিশ্চিত করবে।”

বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাবের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “স্পষ্টভাবে বলতে চাই কোন রকম মব জাস্টিস, আইন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া, গণপিটুনি বা বিচার বহির্ভূত-হত্যাকাণ্ড কোনোভাবে গ্রহণ করা হবে না। এগুলো যদি ঘটে আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি সরকার তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে এবং বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে।”

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ঘটনায় মর্মাহত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষণিক এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে সকালে রমনায় ডিএমপি সদরদপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও মব জাস্টিসের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিভিন্ন অভিযোগে উত্তেজিত জনতা যে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ পিটুনির মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, সেই অধিকার কারও নেই বলে সতর্ক করেন তিনি।

মব জাস্টিসের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। কেউ অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করুন, অন্যথায় নয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফেইসবুকে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে নাহিদ বলেন, “নির্যাতনকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে উত্তেজিত মবকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

“তবে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। মবজাস্টিস গ্রহণযোগ্য নয় এবং কোনও সমাধানও আনবে না।”

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

মূলত সরকার পতনের দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। থানায় আক্রমণ, হামলা, পুলিশ সদস্যদের হত্যার মতো ঘটনার পাশাপাশি হামলার শিকার হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু মানুষ।

সরকার পতনের পর চলমান অস্থিরতার মধ্যেই বুধবার রাতে আলাদা সময়ে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের গেস্ট রুমে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়। পরে জানা যায় তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।

অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অফিসে হত্যাকাণ্ডের শিকার যুবক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তার নাম শামীম মোল্লা।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মব জাস্টিস’র এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠে সমালোচনার ঝড়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেন কিছু শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত