সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার মধ্যে সারাদেশে ১০ দিন ধরে বন্ধ থাকা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ফোরজি রবিবার বিকাল ৩টার পর চালু হচ্ছে। এর পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের সব গ্রাহককে ৫ জিবি করে বোনাস ডেটা দেওয়া হবে।
রবিবার সকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এর আগে সারাদেশে দ্রুত ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপন এবং প্রবাসীদের বৈধ পথে তাদের রেমিটেন্স পাঠানোর বিষয়ে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিফোন অপারেটর বাংলাদেশ এবং মোবাইল ফ্রিনান্সিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “আজ বিকাল ৩টার পর থেকে সারাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফোরজি ইন্টারনেট পুনস্থাপন করা হবে। তার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা আমরা সবসময় দেব এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলোও যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আশা করছি আজকে বিকাল ৩টা থেকে পুনরায় মোবাইল ইন্টারনেট ফোরজি আমরা পুনস্থাপন করতে পারব।”
মোবাইল ইন্টারনেট চালুর পাশাপাশি সব গ্রাহককে ৫ জিবি করে বোনাস ডেটা প্যাকেট দেওয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যারা মোবাইলের গ্রাহক, তাদের ইন্টারনেটের যে প্যাকেজগুলো ছিল, ডেটাগুলো ছিল, তাদের তো ব্যক্তিগতভাবে কোনও দোষ না। নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন না থাকাতে তারা সে সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেনি।
“এ সকাল বিষয় বিবেচনা করে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, মোবাইল নেটওয়ার্কে যারা আসবেন, ব্যবহার করবেন এবং ফোরজিতে যুক্ত হবেন, প্রত্যেক গ্রাহক তিনদিনের জন্য ৫ জিবি বোনাস ডেটা পাবেন। সকল ইন্টারনেট গ্রাহক, যারা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটে যুক্ত হবেন আজকে ৩টার পর, তারা তিনিদিনের মধ্যে এই ৫ জিবি ডেটা প্যাকেজ বোনাস হিসেবে পাবেন। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটররা সবাই সম্মত হয়েছেন।”
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখার প্রসঙ্গে পলক বলেন, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর অনুরোধ ও নির্দেশনা-পরামর্শ সাপেক্ষে ১৭ ও ১৮ জুলাই সাময়িকভাবে কিছু কিছু জায়গায় মোবাইল ফোন ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়।
তিনি বলেন, “১৮ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মহাখালীর ত্রাণ পুনর্বাসন অধিদপ্তরের নিচতলায় একটি সার্ভার সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমাদের ডেটা সেন্টার পুড়িয়ে দেয় এবং ওই এলাকায় যে তিনটা ডেটা সেন্টার আছে, সেখানে যে সোর্স অব ইন্টারনেট ও যে ইলেকট্রিসিটি কেবল সেগুলো পুড়িয়ে দেয় এবং সেখানে একটা ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
“জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সময় ডেটা সেন্টারে যারা কাজ করছিল, তারা তখন ডেটা সেন্টারের কার্যক্রম শাটডাউন করতে বাধ্য হয়।”
এর পাশপাশি সারাদেশে শত শত কিলোমিটার ওভারহেড ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সন্ত্রাসীরা কেটে ও পুড়িয়ে দিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পাশাপাশি আমাদের কক্সবাজার চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় যে ফাইবার অপটিক্যাল কেবল ছিল, সেটা সড়ক এবং সেতু মেরামতের কারণে বেশ কিছু জায়গায় ওভারহেড ছিল, সেগুলোও সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে আমরা দুইদিন পরে জানতে পারি যে কোন লোকেশনে তারগুলো পুড়ে গেছে।
“তখন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেগুলো মেরামত করা হয়। ফলে আমাদের একটি মাত্র কুয়াকাটা সাবমেরিন স্টেশনের কেবলটি ওপেন থাকে। আমরা জরুরি কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য, এয়ারপোর্ট, আমাদের সিপোর্ট, তারপর আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে আমরা আমাদের কূটনৈতিক পাড়া, মিডিয়া, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, ব্যাংকিং এগুলোতে আমরা ইন্টারনেট দেই।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার মধ্যে মোবাইল ইন্টারেনেটের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ ছিল। পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার সীমিত পরিসরে চালু হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা।
এর আগে বাংলাদেশে কখনও এত সময়ের জন্য বন্ধ থাকেনি ইন্টারনেট সেবা। ২০২৩ সালে তিনবার এবং ২০২২ সালে ছয়বার বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। তবে তার কোনোটিই এত লম্বা সময় ধরে ছিল না।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সব অফিসের কার্যক্রমই ইন্টারনেটনির্ভর। এমনকি অফিসের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্যও প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ।
ইন্টারনেট না থাকার কারণে বন্ধ ছিল সকাল সন্ধ্যাসহ দেশের সব অনলাইন গণমাধ্যম। টেলিভিশন ও পত্রিকার কাজ চালু থাকলেও সেগুলোর অনলাইন ভার্সন বন্ধ ছিল। ফলে প্রবাসীদের পক্ষেও দেশের সঠিক খবর পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিল।
সবেচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা। ইন্টারনেট না থাকায় প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ করতে পারছিলেন না তারা।