চলতি পথে সাধারণ মানুষের মোবাইল হারানো, চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহই শোনা যায়। কিন্তু যেসব মানুষ সার্বক্ষণই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকেন, তাদেরও মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনা ঘটছে অনেকসময়।
বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের ঘটনাগুলো।
এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তার মোবাইল ফোন খুইয়েছিলেন। এই তালিকায় দেশের আরও রাজনীতিকদের সঙ্গে থাকছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেটা ক্যুলেনায়েরের নাম।
গণভবন এলাকায় মোবাইল হারান সাকিব
গত বছরের ২৭ নভেম্বর গণভবনের আশপাশের এলাকায় মোবাইল ফোন হারিয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।
জিডির পর পুলিশ জানায়, সাকিব আল হাসান ঠিক কোথায় মোবাইলটি হারিয়েছেন, তা বলতে পারছেন না। তবে তার ধারণা, গণভবনের আশপাশের এলাকায় মোবাইল ফোনটি হারিয়ে থাকতে পারেন।
ক্রিকেটার সাকিব রাজনীতিতে নেমে এবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
গাড়িতে বসে ফোন হারান পরিকল্পনামন্ত্রী
২০২১ সালের ১ জুন ঢাকার বিজয় সরণি থেকে ছিনতাই হয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মোবাইল ফোন। এসময় মন্ত্রীর প্রটোকলে পুলিশের একটি গাড়িও ছিল। পরে এ ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলাও হয়।
ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি ছিল ‘আইফোন-এক্স’ মডেলের। মন্ত্রী এটি ছেলের কাছ থেকে উপহার পান বলে জানায় মন্ত্রীর দপ্তর।
ফোন চুরির পর পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, “গাড়িতে বসে কথা বলছিলাম, ছিনতাইকারী ফোনটি নিয়ে গেছে। গানম্যান চেষ্টা করেও ধরতে পারেনি।”
দেড় মাসেরও বেশি সময় পর ওই বছরের ১৯ জুলায় ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। চোরচক্রের ৫ সদস্যও ধরা পড়ে।
জি এম কাদেরও ফোন খোয়ান গাড়ি থেকে
পরিকল্পনামন্ত্রীর মতোই গাড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলার সময় ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ঘটনাটি ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট রাতের।
তিনি তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “রাত ১১টায় ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলাম। বিমানবন্দর এলাকায় গাড়ির এসি কাজ না করায় জানালার গ্লাস খুলে রাখি। এর মধ্যে ফোনে কথা বলার সময় হঠাৎ এক যুবক ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার গাড়িচালক ছিনতাইকারীর পিছু নিলেও ধরা সম্ভব হয়নি।”
তবে ছিনতাইয়ের ঘটনার ১০ দিনের মধ্যেই একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মোবাইলটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৫জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
প্রেস ক্লাবে ২টি মোবাইল হারান শমী কায়সার
২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে একটি ট্যুরিজম কোম্পানির যাত্রা শুরুর আয়োজনে দুটি মোবাইল ফোন খোয়ান অভিনেত্রী শমী কায়সার। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠান শুরুর সময় শমী তার মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনাটি চিৎকার করে জানালে গোটা মিলনায়তনেই হট্টগোল বেঁধে যায়। শমী সাংবাদিকসহ মিলনায়তনে উপস্থিত সবাইকে তল্লাশির উদ্যোগ নিলে অনেকেই তার প্রতিবাদ জানান। পরে মিলনায়তনের সিসিটিভির ভিডিও থেকে ফোন চুরির ঘটনাটি নিশ্চিত হওয়া গেলেও চোর শনাক্ত করা যায়নি।
ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, কেক কাটার সময় পাশেই থাকা শমী কায়সারের ফোন দুটি চুরি করে নেন সাদা টি-শার্ট পরা এক তরুণ, ভিডিওতে তার মুখ দেখা যায়নি।
আয়োজক প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা অনুষ্ঠানে ওই টি-শার্ট পরা ছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, চেহারা দেখা না যাওয়ায় তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না আদৌ ওই তরুণ তাদের স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন কি না?
মসজিদে গিয়ে ফোন খোয়ান রেলমন্ত্রী
ঢাকার বেইলি রোডের টিপটপ মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে নিজের মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারির এই ঘটনার ২ দিন পর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।
সে সময় পুলিশ জানায়, মসজিদে নামাজ পড়ার পর মন্ত্রী তার ব্যবহৃত মোবাইলটি খুঁজে পাচ্ছেন না। মোবাইলটি চুরি হয়েছে, নাকি কোথাও পড়ে গেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রদূতের মোবাইল চুরি
২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ‘ফ্রিডম’ নামের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গিয়ে নিজের মোবাইল ফোন হারান নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেটা ক্যুলেনায়ের।
তার ব্যাগটিই চুরি হয়ে গিয়েছিল। তাতে আইপ্যাড, ব্যাংকের কার্ড, বাসার চাবি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ছিল।
ওই দিন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত যখন মঙ্গলবাতি জ্বালাচ্ছিলেন, সে সময়ই চুরির এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হয়।
কারণ, বাতি জ্বালিয়ে তিনি নিজ চেয়ারে ফিরে গিয়ে ব্যাগটি খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় রাষ্ট্রদূত মর্মাহত হলেও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। পরে এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়।
সমাবেশে ফোন হারান রুমিন
কুমিল্লায় দলের বিভাগীয় সমাবেশে গিয়ে মোবাইল ফোন হারিয়েছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা।
২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে সমাবেশস্থল টাউন হল মাঠে যাওয়ার পর তার ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়। সমাবেশে যাওয়ার কিছু সময় পর নিজের মোবাইল ফোন চুরির বিষয়টি টের পান তৎকালীন সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। মোবাইল ফোনের কথা যখন স্মরণ হয়, তখন তিনি নিজের ব্যাগ খুলে দেখেন সেটি নেই।
পরে বিষয়টি বিএনপি নেতা ও কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে জানালেও আইনি কোনো পদক্ষেপ নেননি রুমিন।
মুন্না ফোন হারান স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে
২০২৩ সালের ৯ জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে মোবাইল ফোন খুইয়েছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না। ওই দিন দুপুরে শহরের শহীদ এম মনসুর আলী মিলনায়তনে এই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সেসময় মুন্নার ব্যক্তিগত সহকারী ইকরামুল হক স্বপন জানান, সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড়ে সংসদ সদস্যের স্যামসাং জেড ফোল্ড-২ মডেলের ফোনটি খোয়া যায়।
শপথ নিতে গিয়ে নতুন এমপি হারালেন ফোন
বুধবার জাতীয় সংসদে শপথ অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে মোবাইল ফোন হারান নওগাঁ-৬ আসন (আত্রাই-রানীনগর) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ওমর ফারুক। দুপুর ১টার দিকে সংসদ ভবনের বকুল তলা গেইটে (মানিকমিয়া এভিনিউ) এই ঘটনা ঘটে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত ওমর ফারুকের স্ত্রী বলেন, “সংসদ ভবন থেকে বের হওয়ার সময় অনেক মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে আসে। তখনই ঘটনাটি ঘটে।”
ওমর ফারুকের বড় ছেলে সাহিত্য জানায়, তার বাবা ওয়ান প্লাস-৯ ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। সেটিই নিয়ে গেছে পকেটমার।