ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলকে পিটিয়ে মারার আগে তাকে খেতে দেওয়া হয়েছিল ভাত। সেই দৃশ্য ভিডিও করা হয়। ছবি ঘুরছে তার লাশেরও। ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সকলে জানাচ্ছেন ক্ষোভ।
এরই মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে তোফাজ্জলের শেষবারের মতো খাবারের দৃশ্যটি ইলাস্ট্রেশানে তুলে এনেছেন শিল্পী সুলতানা মেহজাবিন চৈতি। ছবিটির নাম তিনি দিয়েছেন ‘দ্য লাস্ট সাপার’।
তিনি জানান, ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত দেয়াল চিত্রকর্ম ‘দ্য লাস্ট সাপার’- এর অনুপ্রেরণায় ছবিটি ইলাস্ট্রেশান করেছেন তিনি। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডও নেওয়া হয়েছে সেখান থেকে। ১৪৯৫-১৪৯৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভিঞ্চি ছবিটি আঁকেন। যিশুখ্রিস্ট তার বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মৃত্যুর আগে যে শেষ নৈশভোজ সারেন সেই ছবিটিই এঁকেছিলেন ভিঞ্চি। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার নতুন রূপ দিলেন চৈতি।
ছবিটিতে দেখা যায়, সামনে তোফাজ্জল বসে ভাত খাচ্ছেন। পেছনে ওপরে লেখা- ‘আগে চান্স পেয়ে দেখান’-বাক্যের ‘চান্স পেয়ে’ শব্দ দুইটি কেটে সেখানে ‘মানুষ হয়ে’ জুড়ে দিয়েছেন শিল্পী। যার অর্থ দাঁড়ায় এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরবের চেয়ে মানুষ হয়ে ওঠাই প্রয়োজন সবার আগে।
এদিকে, চৈতির ইলাস্ট্রেশান করা ছবিটির মাধ্যমে তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, শোক ও ক্ষোভ জানাচ্ছেন সবাই। ইতিমধ্যেই ছবিটি শেয়ার হয়েছে ২৯ হাজার।
গণভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনায় ‘মব জাস্টিস’ এর মধ্য দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন তোফাজ্জলকে শিকার হতে হয়েছে এই মব জাস্টিসের তেমনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।
তিনি লিখেছেন, “তুমি যদি স্বাধীনতার মর্ম না বোঝো, তাহলে তুমি স্বাধীনতার স্বাদ হারাবে। আব্বার কাছে শুনতাম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকের মধ্যেই জোশ চলে আসছিলো যে সে-ই সব। সে নিজেই অভিযোগকারী, নিজেই বিচারক, নিজেই এক্সিকিউশনার। হাতে অস্ত্র আছে, অথবা আছে মবের শক্তি। সুতরাং মার, মেরে ফেল। ফল কি হয়েছিল আমরা জানি।”
ফারুকী লেখেন, “আচ্ছা স্বাধীনতার পর না হয় একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল, এমন কি যখন আওয়ামী লীগের কঠিন আঁটুনির ভেতর আটকা ছিল দেশ, তখনও কি আমরা বাড্ডার এক মাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারি নাই? রংপুরে নামাজের পর এক মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে মেরে পুড়িয়ে দেই নাই?”
“আমি আশা করছিলাম, এই নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে সাথে নতুন দায়িত্বের ব্যাপারটা আমরা উপলব্ধি করব। আমাদের দিলে রহম জিনিসটা আসবে। একশ জন মববাজি করতে আসলে দুইজন হলেও রুখে দাঁড়াবে। ঢাবি আর জাহাঙ্গীরনগরে কি এরকম চারজন ছিলো না রুখে দাঁড়ানোর? এটা লজ্জার, বেদনার”, যোগ করেন ফারুকী।
আইন হাতে তুলে নেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ফারুকী বলেন, “সবাই দায়িত্ব নিই চলেন। মববাজি বন্ধ করেন। ফ্যাসিবাদিদের ফাও আলোচনার বিষয় উপহার দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, প্লিজ। আলোচনাটা থাকতে দেন রিফর্মে, ফ্যাসিবাদের বিচারে।”