ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ এর নতুন এক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনায় ভারতের পুষ্টিবিদদের মধ্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে।
কারণ নির্দেশনার ৭ নং ধারায় বলা হচ্ছে প্রতিদিন মাঝারি মাত্রার তেল চর্বিতে নাকি শরীরের কোনও ক্ষতি নেই।
এতে আরও বলা হচ্ছে, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার তৈল বীজ এবং চর্বি, বিশেষত ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য দরকারী।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে চর্বি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শটি একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে এই নির্দেশনা।
এমনকি ওজন ঝরাতে গিয়ে চর্বি জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দেওয়ার নাকি কোনও দরকার নেই। কারণ খাবারে চর্বি এবং তেলের উপস্থিতি উদর ভর্তি থাকার অনুভূতি দেয় দীর্ঘক্ষণ, দেয় তৃপ্তি। ফলে ক্ষুধা লাগে দেরিতে।
কিন্তু নানা কারণে এই জাতীয় খাবার নিয়ে আছে বহু নেতিবাচক ধারণা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য থেকেই মিলতে হবে পর্যাপ্ত তেল এবং চর্বির।
ডাল, মটরশুটি এবং অনেক শাক-সবজিতে সাধারণত কিছু পরিমাণ চর্বির উপস্থিতি থাকেই। পাশাপাশি বাদাম, বিভিন্ন তৈল বীজ এবং দুগ্ধজাত খাবারগুলোতে সহজাতভাবেই থাকে চর্বির উপস্থিতি।
এই চর্বি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি চাহিদা মেটায়। বিশেষ করে এইসব খাবারে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড।
ফলে দৈনন্দিন রান্নায় ব্যবহৃত তেল এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত অথবা চর্বির উপস্থিতি এমনভাবে রাখা উচিত যাতে আমাদের প্রতিদিনকার চাহিদা মেটে।
চর্বির শক্তি
চর্বি মানেই যে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি এ-কথা কে-না জানে। কিন্তু শরীরবৃত্তীয় বহু কাজে চর্বির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আমরা কজন জানি।
হরমোন উৎপাদন এবং সেল সিগনালিং-এ চর্বি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। খাবারের স্বাদ বাড়াতেও চর্বি রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, যা কিনা কখনো কখনো অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে।
পুষ্টিবিদ এবং ওয়েলনেস কনসালটেন্ট চিকিৎসক নীলাঞ্জনা সিং এর মতে, “চর্বিতে তিন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এগুলো হলো- স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এসএফএ), পলিআন স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (পিইউএফএ) এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এমইউএফএ)। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এন-৬ পিইউএফএ এবং এন-৩ পিইউএফএ থাকা অপরিহার্য। তবে এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলোর আদর্শ অনুপাত খাদ্যে আছে কিনা তা নিশ্চিত করা জরুরী। অন্যদিকে দৈনন্দিন খাদ্যে উচ্চমাত্রার এন-৬ পিইউএফএ থাকা আশঙ্কাজনক।”
ট্রান্স ফ্যাট
তবে ট্রান্স ফ্যাট সম্পর্কে দেওয়া হয়েছে ভিন্ন নির্দেশনা। এদের সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কথাই বলা হচ্ছে নির্দেশনায়। সাধারণত বেকারি আইটেম এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
তাই বেকারি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিমিত গ্রহণ করে বাড়িতে রান্না করা ফ্রেশ খাবার দাবার খেতেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট
খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ হতে পারে ক্ষতির কারণ। ঘি, নারকেল তেল এবং পাম ওয়েলে উচ্চ মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ১ চা চামচ স্যাচুরেটে ফ্যাট যথেষ্ঠ। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের চমৎকারিত্ব বুঝতে হলে বুঝতে হবে এর অনুপাত।
নারকেল তেল এবং ঘি কিছু কিছু থেরাপিউটিক ডায়েটে ব্যবহার করা হয়।
পামওয়েলের ৪০ শতাংশ ফ্যাটি অ্যাসিড হলো মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড করোনারী আরটারি হার্ট ডিজিস নিরসনে ভূমিকা রাখে।
কতটুকু ফ্যাট দৈনিক গ্রহণ করা যাবে
পুষ্টিবিদদের মতে দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির অন্তত ৩০ শতাংশ ফ্যাট থেকেই আসা উচিৎ। পরিমাণে যা ৫৫ গ্রাম।
রান্নার তেল থেকে ফ্যাট গ্রহণ করা যেতে পারে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ গ্রাম অথবা ৪ থেকে ৫ চা চামচ। এরমধ্যে মাত্র ১ চা চামচ ফ্যাটের উৎস হতে পারে ঘি, পাম ওয়েল এবং নারকেল তেল। যেগুলো মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডের সমন্বয় বেশ কঠিন। ফলে এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসরণ করাই শ্রেয়। শেষ কথা হল, চর্বি বা ফ্যাটকে যেমন একেবারে বাদ দেওয়ার কিছু নেই তেমনি এটি গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিমাণের ব্যাপারে হতে হবে সচেতন।