সম্প্রতি ইউক্রেন ও পোল্যান্ড সফর গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে।
রাজনৈতিকভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশটির আকাশে মোদীকে বহনকারী উড়োজাহাজটি রবিবার প্রায় ৪৬ মিনিট ছিল। কিন্তু আকাশপথ ব্যবহার করলেও রীতি অনুযায়ী ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে এবিষয়ে কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি।
এই ঘটনা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ফের উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের গণমাধ্যমেও বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।
ভারতের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা এখন উন্মুক্ত।
দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রীতি বা ঐতিহ্য অনুযায়ী সাধারণত কোনও রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করার সময় একটি শুভেচ্ছাবার্তা দেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেটি করেননি।
পাকিস্তানের উড়োজাহাজ শিল্পের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, শুভেচ্ছাবার্তা দেওয়া একটি ঐতিহ্য, বাধ্যতামূলক নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে মোদী ভারতে তার সমালোচকদের তোপের মুখে পড়তে পারেন।
মোদীকে বহনকারী উড়োজাহাজটি গত শনিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত টানা ৪৬ মিনিট পাকিস্তানের আকাশে ছিল।
উড়োজাহাজটি চিত্রল সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানের আকাশে প্রবেশ করে দেশটির ইসলামাবাদ ও লাহোরের উপর দিয়ে উড়ে আসে। এরপর সেটি ভারতে ঢোকে অমৃতসর হয়ে।
পাকিস্তানের উড়োজাহাজ শিল্পের সূত্রটি বলেছে, “কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজের পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারে আলাদা করে কোনো অনুমতি নিতে হয় না। কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজকে একটি কল সাইন দেওয়া হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানদের বহনকারী উড়োজাহাজকেও নিজেদের আকাশসীমা অতিক্রমের সময় ‘পাকিস্তান ওয়ান’ কল সাইন দেওয়া হয়।”
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পর থেকে ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশপথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল পাকিস্তান।
সেদিন ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে দেশটির বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর আস্তানায় হামলা চালায়।
ভারতের গণমাধ্যমের দাবি, ওই হামলায় প্রায় ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়। তবে পাকিস্তান বলেছিল, ওই হামলায় একজন মানুষও মারা যায়নি।
ওই ঘটনার পর প্রায় দুই বছর পাকিস্তান তাদের আকাশ পথে ভারতের কোনও উড়োজাহাজ প্রবেশ করতে দেয়নি।
গত ৬ আগস্ট থেকে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পাল্টা হামলা শুরু করেছে। এরপর থেকে এই প্রথম অন্য কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে সফরে গেলেন। সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদী।
এর আগে গত ৮ জুলাই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, “মনে করা হচ্ছে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যের বার্তা দিতেই এবার রাশিয়ার শত্রু দেশে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়াকে সন্তুষ্ট করতেই তার এই সফর।”