বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কঠোর সমালোচনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি/আপ) জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
সদ্য কারামুক্ত কেজরিওয়াল ভারতের মহারাষ্ট্রের থানেতে সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান ও রাশিয়ার উদাহরণও টানেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতে গণতন্ত্র ‘শেষ করে দেওয়ার’ চেষ্টা করছেন– এমন অভিযোগ তুলে কেজরিওয়াল বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট যদি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যায়, তাহলে তারা মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলগুলোর নেতাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করবে।
“আমার কথাগুলো লিখে রাখুন… আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সত্য… যদি এই লোকগুলোকে আবার ভোট দেওয়া হয়, তারা (এনসিপি (এসপি) সুপ্রিমো) শরদ পাওয়ার ও সুপ্রিয়া সুলেকে গ্রেপ্তার করবে… তারা (শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান) উদ্ধব ঠাকরে ও তার ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে গ্রেপ্তার করবে।”
বিজেপি উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা ও শরদ পাওয়ারের এনসিপি ভাঙার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন ২০১১ সালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দিল্লিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া কেজরিওয়াল।
২০১৩ সাল থেকে দিল্লির প্রাদেশিক নির্বাচনে একটানা বিজয়ী হয়ে আসছে কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি। ২০১৫ সাল থেকে তিনি টানা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর পাঞ্জাবেও জয় পায় আম আদমি পার্টি। দলটি বর্তমানে পাঞ্জাবেরও প্রাদেশিক শাসক দল।
তবে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা অবস্থাতেই গত ২১ মার্চ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন কেজরিওয়াল। তিনিই ভারতের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যাকে পদে আসীন থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।
কেজরিওয়াল ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, জাতীয় নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে বিপাকে ফেলতেই তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে বিজেপি সরকার।
দেড় মাস কারাবাসের পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গত ১০ মে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন কেজরিওয়াল। কারাগার থেকে বেরিয়েই দেশকে ‘স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচাতে’ ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জামিনে থাকাকালে কেজরিওয়াল চলমান লোকসভা নির্বাচনে নিজ দলের প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারবেন। আগামী ১ জুন লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলে পরের দিনই তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার থানে জেলার ভিওয়ান্ডিতে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতাকালে কেজরিওয়াল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রী ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের সরকারের মন্ত্রী ও তার দল ডিএমকে নেতাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে গ্রেপ্তার করেছে সে কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “দেখুন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কীভাবে বিরোধীদের কারাগারে নিক্ষেপ বা হত্যা করেছেন এবং তারপর নির্বাচন করেছেন।”
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও একই ধরনের পরিস্থিতির কথা বলেন তিনি।
“বাংলাদেশে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে (এবং শেখ হাসিনা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন)… পাকিস্তানে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ইমরান খান নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এক সময় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমাদের দেখে শিখত… এখন মোদী তাদের কাছ থেকেই শিক্ষা নিচ্ছেন,” বলেন কেজরিওয়াল।
তিনি বলেন, “এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ হচ্ছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, যাকে দুই মাসের মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হবে… যখন আমি আগেও একথা বলেছিলাম, তখন বিজেপির কেউ এ নিয়ে কথা বলেনি বা তার (যোগী আদিত্যনাথ) পাশেও কেউ দাঁড়ায়নি… এর অর্থ হলো– এটা ঘটতে যাচ্ছে।”
কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার কথা উল্লেখ করে কেজরিওয়াল অভিযোগ করেন, আম আদমি পার্টির ব্যাংক অ্যাকাউন্টও সরকার জব্দ করার চেষ্টা করছে।
তথ্যসূত্র : ডেকান হেরাল্ড ও ডন