কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ঢাকায় পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে আগুন ধরানো হয়েছে মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে।
বৃহস্পতিবার সংঘাতের মধ্যে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। মহাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছিল। সকালেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
দুপুরে মহাখালীতে রেলগেইটে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। সকাল থেকে ওই এলাকায় অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়।
চাপের মুখে এক পর্যায়ে অবরোধকারীদের একাংশ দক্ষিণ দিকে এবং এক অংশ উত্তর দিকে সরে আসে।
উত্তর দিকে যারা সরে এসেছিল, তারা আমতলীতে পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর পুলিশ সেখানে চড়াও হলে তারা মহাখালী-গুলশান সড়কের দিকে সরে আসে।
বিকাল ৪টার দিকে বিভিন্ন ভবন ভাংচুরের সময় দুর্যোগ ভবনের নিচে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন নেভানো না যাওয়ায় তা বহুতল ভবনটিতেও ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ভবনে যারা ছিলেন, তারা ছাদ থেকে আশপাশের ভবন দিয়ে নেমে আসেন। আগুনে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দুর্যোগ ভবনের পাশেই খাজা টাওয়ার, যেখানে কয়েক মাস আগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ও আগুনের ধোঁয়া উপরে উঠছিল এবং সেখানে থেকে থেকে বিস্ফোরণ ঘটছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পুড়ে যাওয়া গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটছে সেখানে।
আগুনের কারণে আশপাশের ভবনগুলো খালি করে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা আশপাশের ভবন থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি ছিটাচ্ছিলেন।
সেই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস যেতে পারেনি। পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া ফায়ার সার্ভিস যেতে পারছে না বলে বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মহাখালী এলাকায় সন্ধ্যার সময় কোনও পুলিশ দেখা যায়নি। একদল অবরোধকারী রেলগেইটে অবস্থান নিয়ে আছে। তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে। কোনও গাড়ি দেখলেই আক্রমণ চালাচ্ছে।
রেললাইনের ওপর বিভিন্ন পিলার ফেলে রেখেছে অবরোধকারীরা। ফলে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধই রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাড্ডায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর বিকালে রামপুরায় বিটিভি ভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে একদল। তারা ভেতরে থাকা দুটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরে ভেতরে বিভিন্ন ফুল গাছের টব ভাংচুরের পাশাপাশি অভ্যর্থনা কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
সন্ধ্যায় পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
দুপুরে রামপুরা সেতুর পাশে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনারের কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয় অবরোধকারীরা।
মহাখালীতে পুলিশ বক্স একটিও অক্ষত নেই। পুলিশ বক্স পোড়ানো হয়েছে মিরপুর ও কাজীপাড়ায়ও।