দেশের জায়ান্টরা তো বটেই, একই সঙ্গে উড়িষ্যা এফসি, মোহনবাগান, মাজিয়া স্পোর্টসের মতো উপমহাদেশের বড় বড় ক্লাবগুলোও বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় এসে খাবি খেয়ে ফিরেছে।
২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘরোয়া ফুটবলে কিংস অ্যারেনার যাত্রা শুরু। ঘরোয়া ফুটবলে সে এক স্মরনীয় দিন। প্রথমবারের মতো কোনো ক্লাব দলের নিজস্ব ভেন্যু হয়েছে, যা কিনা প্রতিবেশী ভারতেও নেই ! সেদিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পুলিশ এফসিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে ঘরের মাঠে অভিষেক হয় বসুন্ধরা কিংসের।
এরপর থেকে কি ঘরোয়া, কি মহাদেশীয়- কোনও কোনো ম্যাচেই হারেনি বসুন্ধরা কিংস। বেশির ভাগ ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে জিতেছে তারা। ইউরোপে ঠিক হোম গ্রাউন্ড বলতে যা বোঝায়, এই মাঠের প্রতিটি ইঞ্চি যেন বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের চেনা। পারস্পরিক বোঝাপড়া এমনই চমৎকার যে ৩১ ম্যাচে তারা এই মাঠে খেলেছে পরম আত্মীয়ের মতো। কিংস অ্যারেনাও কখনো হারের বিষাদে ভাসায় নি তার দলকে।
এই আত্মীয়তায় ছন্দপতন হলো শনিবার। প্রিমিয়ার লিগে চার বারের চ্যাম্পিয়নদের ঘরের মাঠে ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে মোহামেডান। মিনহাজের দুর্দান্ত এক গোলে সাধারণ মোহামেডান হয়ে ওঠে অসাধারণ।
ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস যেন অপ্রতিরোধ্য এক দল। তাদেরকে কখনোই মাঠে হুমকির মুখে পড়তে হয় নি। পড়লেও তারকদের কৃতিত্বে উতরে গেছে। লিগে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল আবাহনীও সাম্প্রতিক সময়ে এক পেশে ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরেই যাচ্ছেন। তাই প্রশ্ন উঠতো এই বসুন্ধরা কিংসকে কে থামাবে ?
মাঠটা বসুন্ধরা কিংসের জন্য সব সময়ই যেন পয়া হিসেবে দেখা হতো এত দিন। শুধু ক্লাব ফুটবলে কেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলও এই মাঠে থেকে কখনও হার নিয়ে মাঠ ছাড়েনি। এই ভেন্যুতেই প্রীতি ম্যাচে আফগানিস্তানের সঙ্গে দুটি ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টম্বর প্রথমটি গোলশূন্য। পরের ম্যাচটি ৭ সেপ্টেম্বর ১-১ গোলে হয়েছিল ড্র।
এরপর ১২ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২-১ গোলে জয়, ২১ নভেম্বর ১-১ গোলের ড্র লেবাননের সঙ্গে।
এই মাঠে এএফসি কাপের ম্যাচগুলো ছিল উত্তেজনায় মোড়ানো। ২ অক্টোবর উড়িষ্যা এফসিকে বসুন্ধরা কিংস হারিয়েছিল ৩-২ গোলে। ৭ নভেম্বর মোহনবাগানের সঙ্গে জয় ২-১ ব্যবধানে। এরপর ২৭ নভেম্বর মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবকেও হারিয়ে দেয় ২-১ গোলে।
এই যখন বসুন্ধরা কিংসের অবস্থা, তখন অনেকেই ভেবেছিল দেশের ক্লাবগুলো কখনোই আটকাতে পারবে না তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষয়িষ্ণু মোহামেডানে আটকে গেল বসুন্ধরা।
অবশ্য এই কৃতিত্ব মোহামেডানকে বদলে ফেলা কোচ আলফাজ আহমেদের। তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েই ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপে জেতে মোহামেডান। এরপর লিগেও দুর্দান্ত খেলে টেবিলে উঠে এসেছে দুই নম্বরে। শিরোপা লড়াইয়ে এবার সত্যি সত্যিই বসুন্ধরা কিংসের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে চলেছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান।