সাড়ে আট মাস আগে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথটা নিশ্চয় দুই দলের সমর্থকদের এখনও তৃপ্তি দেয়। গত বছর ৩০ মে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রোমাঞ্চের পসরা সাজানো ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ৪-৪ গোলে ড্র। এরপর টাইব্রেকারে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের সত্যিকারের উত্তাপটা টের পাওয়া গিয়েছিল ওই ম্যাচে।
মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে সেই রোমাঞ্চের ছিটেফোটাও ছিল না ফেডারেশন কাপের গ্রুপ ম্যাচে। এবারের মৌসুমের প্রথম ঢাকা ডার্বিতে আবাহনীকে ২-১ গোলে হারিয়েছে মোহামেডান। সাদা-কালো জার্সিতে জোড়া গোল করেছেন ইম্যানুয়েল সানডে । আবাহনীর একমাত্র গোলটি কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের।
‘বি’ গ্রুপের ৩ ম্যাচে সবকটিতেই জয়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। রানার্স আপ আবাহনী।
এর আগের কয়েকটি ম্যাচের মুখোমুখিতে অতিরিক্ত সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছিল ফল। এবার ৯০ মিনিটে মোহামেডান দীর্ঘদিন পর হারাল আবাহনীকে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে লিগ ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে ৪-০ গোলে জেতে মোহামেডান। এরপর মঙ্গলবার জয় পেয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।
মুন্সীগঞ্জে দিনের অন্য ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী ৩-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে।
আবাহনী ও মোহামেডান-দুই দল কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আগেই। মঙ্গলবারের ম্যাচটি তাই ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। কিন্তু দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইটা কি আর আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে আটকে থাকে? মর্যাদার এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরেছে আকাশী নীলরা।
আবাহনীর বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে মোহামেডানকে একাই টেনে নিয়েছিলেন সোলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার একাই করেছিলেন ৪ গোল। কিন্তু এ দিন সেই নায়কই অনুপস্থিত! ঠান্ডা জ্বরে কাবু দিয়াবাতেকে ছাড়াই তাই একাদশ সাজান মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ।
কিন্তু সানডে, দোসোরা দিয়াবাতের অভাবটা বুঝতে দিলেন কোথায়! যদিও প্রথমার্ধ পুরোটাই খেলেছে আবাহনী। নিয়মিত গোলরক্ষক শহীদুল আলমের বদলে কোচ নামিয়েছেন পাপ্পু হোসেনকে।
মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। ওই ম্যাচে শেষ সময়ে বদলি নেমে দুর্দান্ত কিছু সেভ করেন সাকিব আল হাসান। এই ম্যাচে তিনিই একাদশে মোহামেডানের ১ নম্বর গোলরক্ষক ।
ম্যাচের ৩২ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো আবাহনী। জোনাথন ফার্নান্দেজের লং বল রহিমুদ্দিন হেড করলেও মোহামেডান গোলরক্ষক সাকিব ধরে ফেলেন। আর ৩৬ মিনিটে ওয়াশিংটনের দূর পাল্লার হাফ ভলি ক্রস বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
কিন্তু ৩৯ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় আবাহনী। ওয়াশিংটন বল নিয়ে বক্সের দিকে এগিয়ে যান। মোহামেডান ডিফেন্ডার হাসান মুরাদ সর্বশক্তি দিয়েও আটকাতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে। তার থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢোকা কর্ণেলিয়াসের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে স্কোর ১-০।
বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে সমতায় ফেরার সুযোগ আসে মোহামেডানের। জোনাথন ফার্নান্দেজ বল তুলে দেন মোহামেডানের মিডফিল্ডার মুজাফররভের পায়ে। কিন্তু তার আগুনে গোলা শট বাঁ দিকে ঝাপিয়ে দুর্দান্ত সেভ করেন আবাহনীর গোলরক্ষক পাপ্পু।
বিরিতর পর ভিন্ন চেহারায় মোহামেডান। পিছিয়ে থাকা মোহামেডান ৪ মিনিটের ব্যবধানে করেছে ২ গোল। ৫১ মিনিটে ইম্যানুয়েল সানডের গোলে প্রথমে সমতায় ফেরে মোহামেডান। মাঝমাঠের প্রাণভোমরা মুজাফররভের থ্রু পাসে আলতো টোকায় সানডে বল ঢোকালেন জালে (১-১)।
এরপর ৫৫ মিনিটে হাসান মুরাদের থ্রো ইন থেকে দোসো সিদিক করেন ব্যাক হেড। কিন্তু গোললাইনে গিয়ে সানডের ফাইনাল টাচে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই জয় নিশ্চিত হয়েছে মোহামেডানের।
পিছিয়ে পড়েও আবাহনীর ফরোয়ার্ডদের জয়ের ক্ষুধা কমই দেখা গেল ম্যাচে। এমনকি বদলি নামাতেও গড়িমসি কোচ আন্দ্রেস ক্রসিয়ানির। অবশেষে ৮৪ মিনিটে কোচ পাপন সিং ও জোনাথনের জায়গায় মাঠে নামান নাবিব নেওয়াজ ও রবিউল হাসানকে। কিন্তু তারা নেমেও ভাগ্য বদলাতে পারেনি আবাহনীর।
আগামী ২ এপ্রিল কোয়ার্টার ফাইনালে মোহামেডানের প্রতিপক্ষ শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। ১৬ এপ্রিল বসুন্ধরা কিংস খেলবে রহমতগঞ্জের সঙ্গে। ২৩ এপ্রিল শেখ জামাল ধানমন্ডির প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ পুলিশ এফসি। ৩০ এপ্রিল আবাহনী মুখোমুখি হবে ফর্টিস এফসির।
আগামী ৭ ও ১৪ মে সেমিফাইনাল। ফাইনাল ২১ মে।