ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে শোকবার্তায় সোমবার এ ঘোষণা দেন তিনি। একইসঙ্গে রাইসির মৃত্যুতে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ইরান সরকারের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ সোমবার বৈঠকে বসে। বৈঠকে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন মোখবার।
বৈঠক শেষে ইরানের সংবাদমাধ্যমকে মোখবার বলেন, “বাধাহীনভাবে নির্ধারিত দায়িত্ব সম্পাদনে আমরা প্রেসিডেন্ট রাইসির পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাব।”
রবিবার আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি।
সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি ও প্রদেশটিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম।
বাঁধ উদ্বোধন শেষে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন রাইসি। পথে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
সোমবার সকালে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট পীর হোসেন কোলিভান্দ জানান, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পরে ইরানের বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ জানায়, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ হেলিকপ্টারের সব যাত্রী মারা গেছেন।
রবিবার বিকালে (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানেরও মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার মন্ত্রিসভায় ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানিকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
খামেনির ঘনিষ্ঠ মোখবার
ইরানের সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসির মতো মোখবারও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। আর প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন না কেন, ইরানে ক্ষমতার চাবিকাঠি আসলে খামেনিরই হাতে।
দেশটির খুজেস্তান প্রদেশের দেজফুল শহরে ১৯৫৫ সালে জন্ম মোখবারের।
আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মেডিকেল ইউনিটের কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
২০২২ সালের অক্টোবরে মস্কো সফর করা ইরানের প্রতিনিধি দলে মোখবার ছিলেন বলে একাধিক সূত্র সেসময় রয়টার্সকে নিশ্চিত করে।
ইরানের ওই প্রতিনিধি দল রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও আরও ড্রোন সরবরাহে রাজি হয়েছিল।
এক সময় খামেনি-সংশ্লিষ্ট সিতাদ নামের একটি বিনিয়োগ তহবিলেরও প্রধান ছিলেন মোখবার।
২০১০ সালের জুলাইয়ে সিতাদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোখবারকে একটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সে তালিকায় সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ‘পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সে সময় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অবশ্য দুই বছর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন মোখবারকে সেই তালিকা থেকে বাদ দেয়।
২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসি জয়ী হলে মোখবারকে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ইরানের ক্ষমতা কাঠামোয় সর্বোচ্চ নেতার হাতেই সব ক্ষমতা। রাষ্ট্রের প্রধান তিনি। প্রেসিডেন্টকে দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলা যায়। সর্বোচ্চ নেতার পরামর্শ নিয়েই সরকার চালিয়ে থাকেন প্রেসিডেন্ট।
তথ্যসূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, টিআরটি ওয়ার্ল্ড