পুলিশের বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ-প্রচার করা হচ্ছে, এমন মত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ)। এসব প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত বলেও আখ্যা দেওয়া হয় সেখানে। প্রশ্ন তোলা হয় সাংবাদিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়েও।
বিবৃতি প্রকাশের ১১ দিন পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন বিপিএসএ সভাপতি অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম।
সোমবার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথে’ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সব সময় বলে এসেছি যে, ব্যক্তির দায় সংগঠনের বা বাহিনীর না। এই কথাকে আমরা ধারণ করি। কিন্তু পাশাপাশি অতিরঞ্জিত এবং খণ্ডিত তথ্য থাকে বিভিন্ন সংবাদে। যেমন, আমাদের এক কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছিল, তিনি সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আসলে তিনি পালিয়ে যাননি। সে কারণে প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা অনুরোধ জানিয়েছি যেন ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী নিয়ে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক ও সাংবাদিকতার নীতি যথাযথ অনুসরণ করা হয়।”
প্রতিবাদলিপিতে সাংবাদিকদের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের কোনও অর্ডার (আদেশ) করিনি। শুধু পুলিশ নয়, যে কোনো নিউজ করার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ করেছি। এটি পেশাগতভাবে আসলে যে কেউ করতে পারে। অনুরোধ রাখা না রাখা আপনাদের বিষয়। আমরা শুধু অনুরোধ করেছি।”
গত ২১ জুন দেশের সব গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই চিঠি পাঠায়।
এরপর চিঠির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানায় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। পাল্টা বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ জানায়, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্যকে স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার প্রতি অশোভন ও অযৌক্তিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
সংবাদপত্রের মালিকদের এই সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (নোয়াব) এ ঘটনায় বিবৃতি দেয়। সেখানে বলা হয়, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নৈতিক সমর্থন জুগিয়েছে বলে মনে করে নোয়াব।
এছাড়া পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির জবাব দেয় সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (ক্র্যাব) বিভিন্ন সংগঠন।
সাংবাদিকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদের মধ্যে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আর কোনও কথা বলা হয়নি। ১১ দিন পর প্রথম বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন মনিরুল ইসলাম।