ত্রিপুরার পর এবার ভারি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাট। গত তিন দিনে সেখানে অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে।
রাজ্যটিতে আরও কিছুদিন ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত গুজরাটে ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আইএমডি।
বিশেষ করে, বৃহস্পতিবার সৌরাষ্ট্রসহ ১২টি জেলায় অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। জেলাগুলো হলো- কচ্ছ, দেবভূমি দ্বারকা, জামনগর, মোরবি, সুরেন্দ্রনগর, রাজকোট, পোরবন্দর, জুনাগড়, গির সোমনাথ, আমরেলি, ভাবনগর ও বোটাদ।
এ ছাড়া হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে আরও ২২ জেলায়। নতুন করে বৃহস্পতিবার আবারও ভারি বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ এলাকা ঘিরে একটি গভীর নিম্নচাপ বিরাজ করছে। সেটি ক্রমশ উত্তর-পূর্ব আরব সাগরের দিকে এগোচ্ছে। এই নিম্নচাপের কারণেই গত সপ্তাহ থেকে গুজরাটে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, গুজরাটে প্রতি বছর গড়ে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, গত কয়েকদিনেই তার চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এবারে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় ১০৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণেই বন্যা পরিস্থিতির এতোটা অবনতি হয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, আজওয়া ও প্রতাপপুরা জলাধার থেকে বিশ্বামিত্র নদীতে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ভাটির (ডাউনস্ট্রিম) এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে।
ভাদোদরার কিছু অংশ এবং নদীর তীরবর্তী অন্যান্য শহর ও গ্রামগুলো ১০ থেকে ১২ ফুট পানির নিচে চলে গেছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেবভূমি দ্বারকা, জামনগর, রাজকোট এবং পোরবন্দর জেলায়। শুধু দেবভূমি দ্বারকা জেলাতেই ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের ১৪০টি জলাধার ও বাঁধ এবং ২৪টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জাতীয় ও রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ছাড়াও সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য ডাকা হয়েছে।
বুধবারই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে ফোন করে সে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ নিয়ে খোঁজখবর নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয় গুজরাট সরকারকে।
এর আগে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যেও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়াবহ বন্যা হয়। ১৯ থেকে ২৩ আগস্টের সেই বিধ্বংসী বন্যায় ৩১ জনের মৃত্যু হয় এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও দুজন।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস