সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আরও কয়েকজন সমন্বয়কে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এখন পর্যন্ত ছয়জনকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ‘কোটা পুনর্বহাল চলবে না’ নামের একটি গ্রুপে বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সাতজনকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
এই বাইরে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে বলা হচ্ছে, সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমন্বয়কারী নিয়েই কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫ জন সমন্বয়কারী রয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রথম সারির নেতৃত্বে আছে।
‘কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না’ নামে ফেইসবুক গ্রুপটিতে এবি জুবায়ের নামের একটি প্রোফাইল থেকে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সাতজন সমন্বয়ককে সাদা পোশাকে ডিবি তুলে নিয়ে গেছে। তারা হলেন– নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নুসরাত তাবাসসুম ও আরিফ সোহেল।
এই সাতজনের মধ্যে আরিফ সোহেল বাদে বাকি ছয়জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে ডিবি। আরিফ সোহেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও।
কোটা আন্দোলনের প্রথম সারির তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে শুক্রবার বিকালে ঢাকার গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে রাতে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ জানান, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এরপর শনিবার সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকেও ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় ডিবি।
সবশেষ রবিবার ডিবির পক্ষ থেকে নুসরাত তাবাসসুম নামে আরেক সমন্বয়ককে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শনিবার রাত ৩টার দিকে একটি মাইক্রোবাস বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। এতে সাদা পোশাকে ৫ থেকে ৬ জন বসা ছিল। পরে ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী এলাকা আমবাগান থেকে সোহেলকে তুলে নিয়ে গেছে।”
আরিফ সোহেলের কোনও খোঁজ পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করেছিলাম। সেখান থেকে বলা হয়েছে এই নামে কেউ থানায় নেই।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের শুরুতে রাজপথে আন্দোলন শুরু হলেও তা সংঘাতে গড়ায় ১৫ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আক্রান্ত হওয়ার পর।
১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছিল; তারপর সহিংসতা সারাদেশে ছড়ায় ব্যাপক মাত্রায়। তাতে পাঁচ দিনে প্রায় দুইশ মানুষ নিহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়, তার আলোকে কোটা সংস্কার করে সরকারের প্রজ্ঞাপনও আসে। তখন কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের মুখপাত্রদের অনেকের অনুপস্থিতি দেখা যায়।
যে তিন সমন্বয়ককে শুক্রবার ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের এর আগেও তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন তারা।