কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফোর বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরও পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার রাতের যেকোনো সময় এসব রোহিঙ্গারা বাসে করে উখিয়া থেকে রওয়ানা হবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (এআরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুই দশক আগে জেগে ওঠা ভাসানচরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের স্থানান্তর শুরু হয়। এর আগে ২০১৭ সালে দ্বীপটিতে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর বিরোধীতার মুখেই দ্বীপটিতে রোহিঙ্গাদের পাঠানো শুরু হয়। নানা কারণে শুরুতে খুব কম রোহিঙ্গাই ভাসানচরে যেতে আগ্রহী ছিলেন। তবে ধীরে ধীরে তাদের আগ্রহ বাড়তে থাকে।
এই দফায় যে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, “উখিয়া ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গনে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহি রোহিঙ্গা আসছে। এদের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০ হতে পারে। রাতেই উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা যাবেন এসব রোহিঙ্গা। ওখান থেকে যাবেন ভাসানচরে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের তথ্য মতে, এটা ২৪ তম ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের যাত্রা। এর আগে সবশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ তম বারে ১ হাজার ৫২৭ রোহিঙ্গা ভাসানচরে যান।
এর আগে ২২ দফায় গেছেন ৩২ হাজার রোহিঙ্গা। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে শুরু করেন।
বঙ্গোপসাগরে ১৩ হাজার একর আয়তনের দ্বীপ ভাসানচরের তিন হাজার একর জায়গার চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করে সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্যে বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। লাগানো হয়েছে নারকেল সুপারিসহ বহু গাছপালা। বসবাসের জন্য আছে বাড়িঘর, আশ্রয়কেন্দ্র, আছে পরিকল্পিত রাস্তাঘাটও।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। এদের বেশিরভাগই মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযানে ফলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করাকে ‘জাতিগত নিধন হিসেবে’ অভিহিত করেছে। অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠী এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশে ফেরত যায়নি। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আস্থার ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা দু’বার ব্যর্থ হয়েছে।