‘বয়স অল্প কিন্তু বুদ্ধি ৪৫ বছরের অভিজ্ঞদের মতো’-মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ২০১৬ সালে এমন মন্তব্যই করেছিলেন বাংলাদেশ ও আবাহনীর সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সে বছর আবাহনীর হয়ে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন মোসাদ্দেক।
জাতীয় দলে জায়গাটা অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সবশেষ ২০২২ সালের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি মোসাদ্দেকের। এমনকি ছন্দ হারানো মোসাদ্দেক দল পাননি গত বিপিএলেও। শেষ পর্যন্ত বিপিএলের মাঝপথে তাকে নেয় ঢাকা ক্যাপিটালস।
সেই মোসাদ্দেক এবার আবাহনীর হ্যাটট্রিক ডিপিএল জয়ের নায়ক। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দলের অন্যতম সেরা পারফরমার তিনি। বল হাতে নিজের স্পিন ভেল্কিতে ১৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৩০ উইকেট। এবারের বিপিএলে এটাই যৌথ সর্বোচ্চ উইকেটের কীর্তি। তার সমান ৩০ উইকেট নিয়েছেন আবাহনীরই আরেক স্পিনার রকিবুল হাসান।
ব্যাট হাতে মোসাদ্দেক করেছেন ৪৮৭ রান। গড় ৪৮.৭০, স্ট্রাইক রেট ১০৬.৩৩। দেশের ক্রিকেটে অলরাউন্ডার খরার সময়ে ব্যাট-বল হাতে এমন পারফরম্যান্স প্রশংসনীয়। ডিপিএলে পারফর্ম করেই ২০২২ সালের পর টেস্ট দলে ফিরেছেন এনামুল হক বিজয়। এবারের আসরে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরিসহ সর্বোচ্চ ৮৭৪ রান এনামুলের। বাংলাদেশি প্রথম ব্যাটার হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ৫১টা সেঞ্চুরি তারই। এর পুরস্কার হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে ফিরেছেন এনামুল। তাহলে সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট নেওয়া আর ব্যাট হাতে ৪৮৭ করা মোসাদ্দেক স্বপ্ন দেখবেন না কেন?
আজ (মঙ্গলবার) অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হওয়া মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচেও স্নায়ুর চাপে ভোগেননি মোসাদ্দেক। তার ৬৫ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংসে মোহামেডানের ২৪০ রানর চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। এছাড়া বল হাতে ফিরিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল ইসলামকে। ফিফটি করেছিলেন দুজনই।
২০১৩ সালে আবাহনীতে যোগ দেয়ার পর তিনি দলটির ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন। অনেকে তারকা ক্রিকেটার দল ছাড়লেও আবাহনী ছেড়ে যাননি মোসাদ্দেক। রাজনৈতিক পালাবদলে দলটির কঠিন সময়েও আবাহনীতে থাকা নিয়ে বললেন, ‘‘২০১৩ সালে আবাহনী যোগ দিয়েছিলাম স্পষ্ট মনে আছে। ১৩ বছরে ৯টি শিরোপা জিতেছি। আমি চেষ্টা করেছিলাম আবাহনীতে থাকার। যখন দল গঠন করাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল ওই সময়টাতেও ওইসময় আমার সেই ডেডিকেশনটা ছিল যে আমি আবাহনীতেই খেলব।’’
অধিনায়ক হিসেবে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারায় খুশি মোসাদ্দেক, ‘‘টিম ম্যানেজমেন্টকেও ধন্যবাদ। তারা আমাকে রাখতে পেরেছে। তারা আমাকে সাপোর্ট করেছে। চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি এটাই ভালো লাগছে সব মিলিয়ে।পুরো দল ভালো খেলেছে এটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার।’’
এছাড়া এবারের ডিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৯৮ রান পারভেজ হোসেন ইমন আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬১৪ রান করেছেন মোহাম্মদ নাঈম। বোলিংয়ে ১৪ ম্যাচে মোহামেডানের মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪টি আর ১১ ম্যাচে একই দলের তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন চতুর্থ সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট। সমান ২৩টি উইকেট আছে অগ্রণী ব্যাংকের আরিফ আহমেদেরও।