মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এদের মধ্যে হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা চারজনও রয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী এফএসবি।
হামলাকারীদের পরিচয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এফএসবি বলছে, হামলাটি ছিল পরিকল্পিত। সর্বোচ্চ সংখ্যক হতাহত নিশ্চিত করতেই হামলাটির পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল।
রুশ কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেবে।
ক্রোকাস সিটি হলে শুক্রবার রাতের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৩৩ জন। আহত হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষ।
এফএসবির শনিবারের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলার পর প্রধান চার সন্দেহভাজনকে শনিবার ভোরে রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চল থেকে আটক করা হযেছে। ওই অঞ্চলটি ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ৭৮ ডট আরইউর মতে, সন্দেহভাজন হামলাকারীরা একটি সাদা রেনল্ট সিম্বল/ক্লিও গাড়িতে করে পালাচ্ছিল।
রুশ মিডিয়াগুলো বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তাড়া খেয়ে সন্দেহভাজনরা প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে পালাতে চায়। তখন একজনকে আটক হয়। বাকি তিনজনকে পরে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।
অনলাইনে সন্দেহভাজনদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। আরটি সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ান এমন দুইটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সাংবাদিক আলেকজান্ডার কোটসও একটি ভিডিও পোস্ট করেন তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে।
ম্যাশ টেলিগ্রাম চ্যানেলের খবর অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় অন্তত একজন সন্দেহভাজন আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনও ক্রেমলিন কোনও মন্তব্য করেনি।
এফএসবি জানায়, প্রধান সন্দেহভাজন চারজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউক্রেন যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। বাকি সাতজনকে মস্কোর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।
সন্দেহভাজনদের পরিচয়
রুশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা আটক ১১ জনের নাম ও জাতীয়তা সম্পর্কিত কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু নিশ্চিত করেছে, প্রধান সন্দেহভাজনদের কারোরই রুশ নাগরিকত্ব নেই।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইরিনা ভোল্ক বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন বিভাগ এফএসবির সঙ্গে একত্রে আটকদের প্রত্যেকের রুশ ভূখণ্ডে থাকার কারণ ও থাকার সময়কাল সাবধানে পর্যালোচনা করছে।”
জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন সন্দেহভাজন ভাঙা রুশ ভাষায় কথা বলছে। অন্যজন একজন অনুবাদকের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছে। এক সন্দেহভাজন দাবি করে, তিনি তুরস্কে ছিলেন এবং মার্চের শুরুতে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। তার সাতজন সহযোগীর পরিচয় সম্পর্কে এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।
অস্ত্র ও সরঞ্জাম
ঘটনাস্থলে তোলা ও তদন্ত কমিটির প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করেছিল এবং তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে গুলি ছিল। হামলাকারীদের কাছে একে অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো অস্ত্র এবং প্রায় এক ডজন গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ছিল।
রাশিয়ার লেন্টা নিউজ আউটলেট জানায়, ঘটনাস্থলে একটি সাইগা হান্টিং রাইফেলও পাওয়া গেছে। অন্য মিডিয়াগুলো বলছে, ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে আটকের সময় সন্দেহভাজনদের গাড়ি থেকে একটি মাকারভ হ্যান্ডগান ও একটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিনও উদ্ধার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় এক সন্দেহভাজন জানায়, অস্ত্র সরবরাহকারীদের সঙ্গে তাদের কোনও পরিচয় ছিল না। তাদের সঙ্গে টেলিগ্রামে যোগাযোগ হতো। হামলার ঠিক আগে তারা যে গাড়িটি ব্যবহার করেছিল, সেটিও এক সন্দেহভাজন তার আত্মীয়ের কাছ থেকে কিনেছিল।
উদ্দেশ্য
জিজ্ঞাসাবাদে এক সন্দেহভাজন দাবি করে, তিনি ‘অর্থের জন্য’ এই অপরাধ করেন। তাকে ৫ লাখ রুবল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। হামলার আগে তার ডেবিট কার্ডে এই অর্থের অর্ধেক জমা হয়। রুশ কর্তৃপক্ষ এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করছে।
সন্দেহভাজন হামলাকারী আরও দাবি করেছে, শুক্রবারের হামলার প্রায় এক মাস আগে ‘একজন ধর্মপ্রচারকের ভাষণ’ শোনার পর তার সঙ্গে হামলার পরিকল্পনাকারীরা যোগাযোগ করেছিল।
শুক্রবার ক্রোকাস সিটি হলে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ‘মানুষদের গুলি করেন’। তিনি আরও জানান, তাকে শুধু মানুষ হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে কাকে হত্যা করবে এনিয়ে তার কোনও মাথাব্যথা ছিল না।
জিজ্ঞাসাবাদে কোনও সন্দেহভাজনই স্পষ্টভাবে কোনও চরমপন্থী দলের প্রতি আনুগত্যের কথা জানায়নি।
সম্ভাব্য পরিকল্পনাকারী
রুশ তদন্তকারীরা এখনও হামলার পেছনের সন্দেহভাজন সংগঠক বা সংগঠনের নাম প্রকাশ করেনি।
এফএসবি বলছে, প্রাথমিক সন্দেহভাজনদের সঙ্গে কোনও চরমপন্থী দল বা বাইরের শক্তির কোন সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে কিছু ইউক্রেনীয়র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, যারা তাদের ইউক্রেনে প্রবেশে সহায়তা করতে প্রস্তুত ছিল।
রয়টার্স ও সিএনএনসহ একাধিক পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম অবশ্য বলছে, ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। তারা হামলাকারীদের চারজনের ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা আইএসের পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু সংবাদমাধ্যম যে ছবিটি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বেসবল ক্যাপ পরা চার ব্যক্তি তাদের মুখ ঢেকে রেখেছে। মস্কো এখনও আইএসের দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
তথ্যসূত্র : আরটি