Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

মোস্তাফিজ আউট, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে এখন কী?

ss-mostafiz-ctg16-070124
[publishpress_authors_box]

কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। কখনও পিস্তল হাতে মিছিল করে, কখনও সাংবাদিক পিটিয়ে। এবার ভোটের দিনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এলেন তিনি, প্রার্থিতা বাতিলের কারণে।

রবিবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট শেষের মাত্র ১৫ মিনিট আগে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ভোটের দিন কোনও সংসদ সদস্যের প্রার্থিতা বাতিল নিকট অতীতে দেখা যায়নি। ফলে তা নিয়ে আলোচনা চলছে দেশজুড়ে।

বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি আইন-শৃখলা বাহিনীর প্রতি হুমকি প্রদর্শন করেছেন।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে ৩টা ৪৫ মিনিটে একটি সিদ্ধান্ত গ্র‍হণ করেছে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে কমিশন।”

ভোটের মাত্র ১৫ মিনিট আগে কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হলো- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি আইন-শৃখলা বাহিনীর প্রতি হুমকি প্রদর্শন করছে।”

মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘‘আইন-শৃখলা বাহিনীর প্রতি হুমকি প্রদর্শন করেছেন। চরম আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তার এই প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।”

ওই আসনে ভোট চলবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই আসনে যদি একাধিক প্রার্থী থাকে। তাহলে অবশ্যই সেখানে ভোট চলবে।”

কী আছে ইসির আদেশে   

ইসির লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী অপরাধ সংঘটনের দায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ- ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯১ই ধারা ২ বিধান অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণ হলে এবং কমিশন ওই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হলে লিখিত আদেশে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। 

মোস্তাফিজ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৭৩ ও ৮৪ (এ) এর অধীনে নির্বাচনী অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে ইসিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার প্রতিবেদন দেয়।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অনুচ্ছেদ ৭৩ এ রয়েছে, ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছেন বা অপেক্ষায় রয়েছেন এমন কোনও ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করানোর চেষ্টা করলে দুর্নীতির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন।

এছাড়া কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সমর্থন বা বিরোধিতা করার জন্য কোনও ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনা-নেওয়া করতে যানবাহন ভাড়া নিলে, ভাড়া দিলে, ঋণ দিলে ও নিয়োগ দিলে বা ব্যবহার করলেও দোষী সাব্যস্ত হবেন। কোনও প্রার্থী বিশেষ ধর্ম, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, বর্ণের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে তাকে ভোট দিতে বা না দিতে প্ররোচিত করা হলে এ আর্টিকেল অনুসারে সাজার মুখে পড়তে হবে।

এছাড়া ঘুষ আদান-প্রদান, ছদ্মপরিচয়, অবৈধ প্রভাব খাটানো বা কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দিলেও তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অনুচ্ছেদ ৮৪ এ বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তিকে তার ভোট দিতে প্ররোচিত করলে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত অন্য কোনও কর্মকর্তা বা পুলিশ বাহিনীর কোনও সদস্য দণ্ডনীয় অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন।

গত বছর পিস্তল হাতে মোস্তাফিজুর রহমানের এই ছবি ভাইরাল হয়েছিল সোশাল মিডিয়ায়।

যা ঘটেছিল

রবিবার মোস্তাফিজেরর এক সমর্থককে আটক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। পরে তিনি থানায় গিয়ে হুমকি-ধমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

বেলা সাড়ে ১১টায় বাঁশখালীর দক্ষিণ জলদী আশকরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আবদুল গফুরকে আটক করে পুলিশ। পরে এমপি মোস্তাফিজ তাকে ছাড়াতে বাঁশখালী থানায় যান। সেই ঘটনার একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় এসেছে।

তাতে দেখা যায়, ওসির কক্ষে গিয়ে মোস্তাফিজ জানতে চান, “আমার লোক কী অন্যায় করছে? ধরে আনছেন কেন?” জবাবে ওসি বলেন, “এনে বসিয়ে রাখছি।”

তখন ওসিকে ‘এই থাম’ বলে উত্তেজিত মোস্তাফিজ চেয়ার ছেড়ে ওঠেন। এ ঘটনার ভিডিও করতে থাকা এক পুলিশ সদস্যের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় এমপির অনুসারীরা তাকে নিবৃত্ত করেন।

সেই ভিডিওটি প্রকাশ পাওয়ার পর এক পর্যায়ে তা প্রশাসন হয়ে তা নির্বাচন কমিশনে পৌঁছায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, “কাউন্সিলর আবদুল গফুর জাল ভোট দেওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। ভোট দিতে না পেরে তিনি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করায় ভোটদানে বাধা ও পুলিশের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করলে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।”

এ বিষয়ে কথা বলতে মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত সহকারী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “পৌরসভার এক কাউন্সিলরকে ধরে থানায় বসিয়ে রাখার খবর পেয়ে এমপি স্যার থানায় যান। তিনি ওসির কাছে কাউন্সিলরকে কেন আটক করে রাখা হয়েছে, তা জানতে চাইলে একটু কথা কাটাকাটি হয়। এর বেশি কিছু হয়নি। আর সেটি নিয়ে কৌশলে ভাইরাল করা হলো।”

মোস্তাফিজের প্রার্থিতা বাতিলে কার লাভ?

১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে চট্টগ্রাম-১৬ আসন। এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৭ হাজার ৮৭৬ জন, নারী এক লাখ ৭২ হাজার ৮৯৭। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।

নির্বাচনে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোস্তাফিজুর রহমান আছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান ও ট্রাক প্রতীকের আবদুল্লাহ কবির। এর মধ্যে মুজিবুর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আবদুল্লাহ কবির দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাদের তিনজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।

মোস্তাফিজের প্রার্থিতা বাতিল হলে তাদের মধ্যে যিনি বেশি ভোট পাবেন, তাকে জয়ী ঘোষণার কথা।

তবে ইসির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে মোস্তাফিজের। তাতে যদি তিনি প্রার্থিতা ফেরত পান, তবে চিত্র বদলে যাবে।

আসনটিতে আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবদুল মালেক (চেয়ার), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) আশীষ কুমার শীল (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ কংগ্রেসের এম জিল্লুল করিম (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মামুন আবছার চৌধুরী (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের শফকত হোসাইন চাটগায়ী (মিনার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান (বেঞ্চ)।

মোস্তাফিজ আলোচনায় বারবার

বেশ কবছর ধরেই গণমাধ্যমে শিরোনাম ও আলোচনায় ছিলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান।

২০২৩ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যানারে বাঁশখালীর রাজপথে প্রকাশ্যে পিস্তলের অস্ত্র নিয়ে তাকে মিছিল করতে দেখা গিয়েছিল।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন কিন্তু দল তার বিরুদ্ধে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। উপরন্তু অস্ত্র প্রদর্শন নিয়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনিক কোনও তদন্ত হয়নি। ফলে সেই যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।

এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংবাদ সম্মেলনে ওপর হামলা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুই বছর আগে নির্বাচনী কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে পেটানোর নজির গড়েন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি ক্ষান্ত হননি।

আর এলাকায় জমি দখল, অনিয়মের অভিযোগ তো রয়েছেই। নির্বাচনের আগে দুই সপ্তাহ আগে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা আছে তার ঝুলিতে।

এক সপ্তাহ আগে থানায় গিয়ে মোস্তাফিজ দলীয় লোকদের আটক করলে হাত কেটে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত