দুজনই কুড়ি হয়ে ফুটেছিলেন ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। কাগিসো রাবাদা নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট আর মোস্তাফিজুর রহমান ৯টি।
দুজনেরই ওয়ানডে অভিষেক মিরপুরে ২০১৫ সালে। অভিষেকেই কুড়ি থেকে ফুল হয়ে সুবাস ছড়ান দুজনই। ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নেন রাবাদা।
আর ভারতের সঙ্গে অভিষেক ম্যাচে মোস্তাফিজুরের শিকার ৫ উইকেট। পরের ম্যাচে আরও বিধ্বংসী মোস্তাফিজ নেন ৬ উইকেট। রেকর্ড গড়েন প্রথম দুই ওয়ানডেতে একমাত্র বোলার হিসেবে ১১ উইকেট নেওয়ার।
ক্রিকেট বিশ্ব পায় নতুন দুই তারা। দুজনের বোলিংয়ের ধরন অবশ্য আলাদা। রাবাদা নিখাদ ফাস্ট বোলার। যার শক্তি গতি, বাউন্স, সুইং, রিভার্স সুইং আর আগ্রাসন। ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার ছুঁই ছুঁই গতিতেও বল করেছেন তিনি।
মোস্তাফিজের প্রধান অস্ত্র কাটার। গতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের মতো থাকলেও হাতের একই ভঙ্গিতে স্লোয়ার ও কাটার করতে পারাটা বিশেষ কিছু ছিল তার জন্য। দুই ধরনের বোলিংয়ের মতো পছন্দটাও দুই ধরনের তাদের। রাবাদা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন টেস্টকে। আর মোস্তাফিজের পছন্দ সাদা বলের ক্রিকেট।
এজন্যই প্রায় ১০ বছরের ক্যারিয়ারে রাবাদা যেখানে টেস্ট খেলেছেন ৬৬টি, সেখানে মোস্তাফিজ কেবল ১৫টি। দুজনই ওয়ানডে খেলেছেন ১০০টার বেশি। তবে মোস্তাফিজের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যেখানে ১০৬টি, সেখানে রাবাদার ৬৫টি।
পেসাররা চোট প্রবণ জেনেও টেস্টকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দাম আইপিএলেও পেয়েছেন রাবাদা। ২০২২ সালে পাঞ্জাব সুপার কিংস তাকে কিনেছিল ৯.২৫ কোটি রুপিতে। আর ২০১৬ আইপিএলে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলও মোস্তাফিজের দাম ২ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায়নি।
চোট প্রবণতার জন্য হয়তো মোস্তাফিজ টেস্ট খেলতে অনীহা জানিয়েছিলেন বহুবার। এজন্য ক্ষোভ উগরে ২০২২ সালে তখনকার টিম ডিরেক্টর ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন,‘‘মোস্তাফিজ কেন টেস্ট খেলতে চায় না, আমি জানি না। এটা বোর্ডই নির্ধারণ করবে, কাকে কোথায় খেলতে হবে। মোস্তাফিজের অবশ্যই টেস্ট খেলা উচিত।’’
তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অবশ্য সম্মান জানিয়েছিলেন মোস্তাফিজের সিদ্ধান্তকে। আর সে সময় ফাস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করা অ্যালান ডোনাল্ড বলেছিলেন, ‘‘আমি মোস্তাফিজের অনেক বড় ভক্ত। আমি মনে করি, সাদা বলে সে দারুণ এক বোলার।’’
সেই ডোনাল্ডই নিজের দেশের কাগিসো রাবাদাকে কিংবদন্তি বলেছিলেন তখন, ‘‘ওর হিপ রোটেশন অনেকটা জ্যাভেলিন থ্রোয়ারদের মতো। খুবই দ্রুতগতির রাবাদা। এই যুগের কিংবদন্তি বলব ওকে।’’
সর্বকালের সব যুগের একটা রেকর্ড অবশ্য করে ফেলেছেন রাবাদা, আর সেটা এবারের বাংলাদেশ সফরের মিরপুর টেস্টে। মুশফিকুর রহিমের স্টাম্প উড়িয়ে পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিসকে ছাড়িয়ে তিনিই এখন টেস্টে বলের হিসেবে দ্রুততম ৩০০ উইকেটশিকারি বোলার।
ওয়াকারের ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে লেগেছিল ১২৬০২ বল, রাবাদার লাগল ১১৮১৭ বল। তার কম লেগেছে ৭৮৫টি বল। রাবাদার গতিতে খেই হারিয়ে মিরপুরে হেরেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল ১০ বছর পর উপমহাদেশে প্রোটিয়াদের প্রথম টেস্ট জয়।
কমপক্ষে ৩০০ টেস্ট উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে একমাত্র রাবাদার স্ট্রাইক রেটই ৪০-এর নীচে। চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে তার স্ট্রাইক রেট ৩৮.৫। রাবাদা পেছনে ফেলেছেন ডেল স্টেইন (৪২.৩), ওয়াকার ইউনিস (৪৩.৪), ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যালকম মার্শালদের (৪৬.৭ ) মতো তারকাদের।
টেস্টে ৮০০ উইকেট পাওয়া মুত্তিয়া মুরালিধরনের স্ট্রাইক রেট কিন্তু ৫৫.০০। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগেও টেস্ট এমন পারফর্ম্যান্স রাবাদাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বোলিং র্যাংকিংয়ের চূড়াতেও এখন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে মোস্তাফিজের সঙ্গে তুলনা হলেও এখন সেটা বড্ড বেমানান। মোস্তাফিজকে কবেই ম্লান করে টেস্ট ক্রিকেটের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে গেছেন রাবাদা।