Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

প্রেরণা ফেরাতে ‘স্কিনারস নীতি’ কাজে দেয়?

ছবি: দ্য টিনএজার টুডে ডটকম
ছবি: দ্য টিনএজার টুডে ডটকম
[publishpress_authors_box]

১৭৮০ সালের কথা। লন্ডনের বাসাতে টেবিলের উপর ঝুঁকে ইংরেজ দার্শনিক, আইনতত্ত্ববিদ এবং সমাজ সংস্কারক জেরেমি বেন্থাম তার সাড়া জাগানো বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের প্রথম লাইনটি লিখলেন।

“প্রকৃতি মানুষের মাথার উপর দুটি নীতি মেলে রেখেছে; একটি হলো দুঃখ এবং অপরটি আনন্দ। এখন মানুষের হাতেই সব সিদ্ধান্ত;  কোনটি তার করা অবশ্যই দরকার এবং কোনটি সে করতে চায়।”  

এসব কথা নিছক বইয়ের পাতায় ছাপা হয়ে থাকেনি। এখান থেকেই এই ব্রিটিশ দার্শনিক বড় এক ধারণার জন্ম দিলেন – “আমরা সবাই আনন্দ ও দুঃখ দিয়ে পরিচালিত হই।”

আজকে সামাজিক বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখাই তার এই দর্শন মেনে নিয়েছে।

মানুষের মধ্যে আনন্দ পাওয়ার বৈশিষ্ট্য খুব প্রবল। দুনিয়ায় দুঃখ দেওয়া দানব থেকে মানুষ দূরে থাকতে চায়। অনেক মনোবল থাকার পরও টানাপড়েন আমাদের সঙ্কুচিত করে দিতে পারে। এই হতাশাজনক ধাপ থেকে বার হয়ে আসতে আসতেই মূল্যবান শিক্ষার দেখা মেলে; আমরা আমাদের দুঃখ ও আনন্দের চক্রকে চাইলেই নিজেদের মতো করে ভেঙ্গে-গড়ে নিতে পারি। আমরা আসলে যে কোনো কিছু করতে পারি। আর এই ধারণাকে জর্জ ম্যাক নাম দিলেন ’স্কিনারস ল’।     

মানুষের মধ্যে উদ্যম জাগাতে এই ধারণার গভীরে বুঝতে গিয়ে বিগ থিংক ডটকম কথা বলে বিহেভিওরাল সায়েন্টিস্ট কেটি মিল্কম্যানের সঙ্গে; যিনি ‘হাউ টু চেঞ্জ: দ্য সায়েন্স অব গেটিং ফ্রম হোয়ার ইউ আর টু হোয়ার ইউ ওয়ান্ট টু বি’ বইয়ের লেখক।

স্কিনারস ল নিয়ে ম্যাক বলছেন, যখন আমরা কাজ করা নিয়ে গড়িমসি করি তখন আসলে সামনে দুটো করণীয় থাকে; ওই কাজ করায় যতটুকু ঝামেলা তার চেয়ে কাজটা না করাতে পাওয়া কষ্ট অনেক বেশি অথবা ওই কাজ করে ফেলাতে যত আনন্দ তা কাজটা না করার থেকে অনেক বেশি।

এবার কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায় আমাদের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের বি এফ স্কিনার একজন আচরণবাদী; তার নামেই হয়েছে স্কিনারস নীতি। তিনি ইঁদুর আর কবুতরের উপর আচরণের নির্দেশক নিয়ে পরীক্ষা করে এই ধারণাকে পোক্ত করেন। তার মূল যুক্তি ছিল, ইঁদুরের মতোই মানুষও দুঃখ  ও আনন্দে বিশেষ আচরণ প্রকাশ করে।  

এখানে একটিই কৌশল-  একটি কাজ করা বা না করার মধ্যে দিয়ে নিজেকে আনন্দ পুরস্কার দেওয়া অথবা দুঃখের শাস্তি দেওয়া।

কিছু অন্তর্নিহিত প্রেরণা মাঝে মাঝে চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে যা দমন করা মুশকিল। এই যেমন আপনার এখন যে কোনওভাবেই হোক পিৎজা খেতে হবে।

আবার কিছু বাহ্যিক প্রেরণা থাকে; অর্থাৎ শাস্তি এড়াতে বা পুরস্কার পেতে অথবা কোনো বিশেষ লাভের আশায় একটি কাজ করতে হয় আপনাকে। যেমন, আপনি এখন পিৎজা খেতে চান না কারণ সামনে সৈকতে ছুটি কাটানোর আগে মেদ ঝরিয়ে নিতে হবে।

অন্তর্নিহিত আনন্দকে বাহ্যিক পুরস্কারে পরিণত করতে জানে স্কিনারস নীতি।  

আর ‘বিহেভিওরাল সাইকোলজি লিটারেচার’ অনুসারে এ ধরনের কৌশলকে বলে ‘কমিটমেন্ট ডিভাইস’; বিগ থিংককে এ কথা জানান মিল্কম্যান।

“এই কৌশল একটি হাতিয়ারের মতো যা নিজেকে অনুপ্রাণিত করে।”

মিল্কম্যান বলেন, “এতে করে বাহ্যিকভাবে কিছু প্রাপ্তি হবে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়।”

ধূমপান ছেড়ে দিতে চান এমন অনেককে নিয়ে একটি গবেষণার কথাও জানান মিল্কম্যান।

এই গবেষণায় দুটো দল করা হয়। দুই দলেই ধূমপান আসক্তি কাটানোর পণ্য দেওয়া হয়। এরমধ্যে একটি দলে রাখা হয় বিশেষ শর্ত; যদি ছয় মাসের মধ্যে প্রস্রাবে নিকোটিন পরীক্ষায় তারা অনুত্তীর্ণ হয় তবে কোনো অর্থ দেওয়া হবে না তাদের।

ফলাফল হলো, সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে গেল।

যদি আমরা কাজে সফল হতে চাই তাহলে কমিটমেন্ট ডিভাইস পারে আমাদের সঠিক পথে ধরে রাখতে।

কিন্তু কোন ‘কমিটমেট ডিভাইস’ আমাদের জন্য সেরা হবে?  আনন্দের কথা বলে নিজেকে কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে? না কি শাস্তি বা হারানোর ভয় দেখিয়ে নিজেকে কাজে ঠেলে নামাতে হবে?

দুঃখ কিন্তু খুব শক্তিশালী একটি প্রেরণা।

মিল্কম্যান বলেন, “২০০২ সালে ইসরায়েলি আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কাহনেম্যান অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন ‘প্রসপেক্ট থিওরি’ নিয়ে কাজ করে। তিনি এবং আমোস টোভারস্কি দেখলেন যে, দুঃখবোধ এমনকি আনন্দের চেয়েও বড় প্রেরণ হয়ে উঠতে পারে।

“ধরা যাক, ২০ ডলার খুইয়ে আপনি ভীষণ কষ্ট পেলেন। তারপর যদি সেই ২০ ডলার আপনি আবার ফিরে পান তাহলে আপনি খুশি হয়ে ওঠেন। এখানে দুঃখের অনুপাতেই আপনার আনন্দ বোধ হয়।”

এসব আলোচনা মাথায় রেখে মিল্কম্যান তিন বাস্তবধর্মী পরামর্শ রাখেন।

বাজি ধরে দেখুন

বন্ধু অথবা পরিবারের একজনের সঙ্গে কিছু অর্থ নয়তো ভিন্ন কিছু বাজি ধরুন।

তাদের বলুন- যদি আমি আমার জন্মদিনের আগে পাঁচ পাউন্ড ওজন না কমাই তাহলে তুমি একটা প্লেস্টেশন কিনে নিতে পারো। মনে রাখতে হবে কমিটমেন্ট ডিভাইস তখন কাজ করে যখন আপনি এতে দৃঢ় থাকেন।  

সামাজিক দায়বদ্ধতা

সবাইকে জানিয়ে দিন, আপনি কিছু একটা করছেন। আপনার উদ্দেশ্য আর কাজ শেষ করার তারিখ নিয়েও জানিয়ে রাখুন সবাইকে। এতে করে ব্যর্থতার ভয়ে একটা চাপ থাকবে আপনার উপর কাজ করার। আবার খুব কাছের কারও থেকে আপনার কাজে উৎসাহ ও পরামর্শও পেতে পারেন।

একঘেয়ে জীবন এড়িয়ে চলা

আনন্দ ও দুঃখের মাঝামাঝি কোথাও থাকে একঘেয়ে অনুভূতি; যা এক ধরনের শূন্যতা।

২০১৬ সালের এক গবেষণার কথা জানিয়ে মিল্কম্যান অবশ্য বলছেন, যদি দীর্ঘ, বৈচিত্রহীন সিনেমা দেখতে বলা হয় তাহলে এভাবে একঘেয়ে সময় কাটানোর চেয়ে  মাথা ঠুকে নিতে চাইবে অনেকে।

তাই সহজ একটি নীতি হলো, নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

(সূত্র: বিগ থিংক ডটকম)

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত