Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় বাঁচল না শিশু সোনিয়াও

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বুধবার ভোরে মারা যায় সোনিয়া বেগম।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বুধবার ভোরে মারা যায় সোনিয়া বেগম।
[publishpress_authors_box]

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় গুরুতর আহত শেষ সদস্যকেও বাঁচানো গেল না। বুধবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ বছরের শিশু সোনিয়ার মৃত্যু হয়।

মঙ্গলবার রাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের ভাঙ্গার পাড় এলাকার বাসিন্দা ফয়জুর রহমানের ঘরে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে আগুন লাগে।

ভোর ৫টার দিকে ঘরের ভেতরে থাকা ফয়জুর রহমান, স্ত্রী শিরিন বেগম, বড় মেয়ে সামিয়া, মেঝ মেয়ে সাবিনা ও ছেলে সায়েমের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় গুরতর আহত ফয়জুরের আরেক মেয়ে সোনিয়া বেগমকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

মৌলভীবাজারের জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈনুদ্দিন জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত সোনিয়াকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এরপর সেখান থেকে তাকে বুধবার ভোর ৫টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফয়জুরসহ তার পরিবারের সব সদস্য কীভাবে অকালে প্রাণ হারালেন সে বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। ওই সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। ঝড়ে ফয়জুরের ঘরের ওপরে থাকা উচ্চ ভোল্টেজের পল্লী বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে তার টিনের ঘরের চালে পড়ে। টিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় পুরো ঘরে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে।

সেহরি খাওয়া শেষে ফয়জুরের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ভোর ৫টার দিকে বিদ্যুৎ আসার সঙ্গে সঙ্গে আগুনের সূত্রপাত হয়। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তখন বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতে যান ফয়জুর। কিন্তু দরজা বিদ্যুতায়িত থাকায় একে একে পরিবারের পাঁচজন মারা যায়। আহত হয় সোনিয়া।

স্থানীয়রা পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নেভায় ও পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে, জানান এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী।

আগুনে সোনিয়ার দেহের ২৫ ভাগ পুড়ে যায় জানিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। সাধারণত এ ধরনের রোগীদের হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। সোনিয়ারও সেই সমস্যা দেখা দিলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।”

সোনিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বোনের পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন তার মামা আজির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “সোনিয়া স্থানীয় গোয়ালবাড়ী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছিল। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারাও সহযোগিতা করেন।”

বোন-জামাই ফয়জুর বাক-প্রতিবন্ধী ছিলেন জানিয়ে আজির উদ্দিন বলেন, “দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন তিনি। নিজের কোনও জায়গা-জমি না থাকায় অন্যের জমিতে ঘর করে বাস করতেন। ফয়জুর নিজের ঘরে বিদ্যুৎ নিতে পারেননি। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন।”

ওই ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক’ উল্লেখ করে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরীকে কমিটির আহ্ববায়ক করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে আছেন পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল করিম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ঘোষ। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির  মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হয়। এ কারণে রাত আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হয়। ভোর ৫টার দিকে আবার চালু করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এরপর কোনও একসময় বজ্রপাতে পাশের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ইনসুলেটর ক্র্যাক হয়ে যায়। এ সময় আগুন ধরে গিয়ে তার ছিঁড়ে ঘরের চালে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । মঙ্গলবার এ কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত