Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মেয়ের মামলায় এমপি আনারের ভারত যাওয়ার তথ্য নেই

বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এমপি আনারের ছোট মেয়ে ডরিন।
বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এমপি আনারের ছোট মেয়ে ডরিন।
[publishpress_authors_box]

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় খুন হয়েছেন বলে খবর প্রকাশের পর তার মেয়ে দেশে যে মামলা করেছেন, সেখানে তার বাবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার কোনও তথ্য উল্লেখ করেননি। বরং দেশ থেকেই তার বাবা অপহৃত হয়েছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন দাবি করেছেন, গত ৯ মে তার বাবা আনার ঝিনাইদহের উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন। দুদিন পর ভিডিও কলে যখন কথা হয়, তখনই তার বাবার কথা অসংলগ্ন ঠেকেছিল তার কাছে।

অথচ তিন দিন আগে গত ১৯ মে তিনি বাবার খোঁজ না পেয়ে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে যখন গিয়েছিলেন, তখন জানিয়েছিলেন যে চিকিৎসার জন্য তার বাবা ভারত গিয়েছেন।

ডরিন সাংবাদিকদের আরও বলেছিলেন, তার বাবা নিয়মিতই ভারতে যান। এবার গিয়েছিলেন কানের চিকিৎসার জন্য।

এদিন সকালেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, কলকাতায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন সংসদ সদস্য আনার।

কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে আনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বলে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর এলেও তার লাশ সেখানে পাওয়া যায়নি। তবে ওই ফ্ল্যাটে রক্তের ছোপ পাওয়া গেছে।

সেই খুনের তদন্তভার নেওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির আইজি অখিলেশ কুমার চতুর্বেদী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনার ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন বলে তারা তার সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

একজন সংসদ সদস্য হিসাবে আনার স্পিকারকে জানিয়ে তার বিদেশ সফর করেছিলেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মেয়ের সঙ্গে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার।

এদিকে বুধবার আনারের মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর আবার মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে যান আইনের শিক্ষার্থী ডরিন (২৪)। বাবার খুনের বিচার দাবি করেন তিনি।

সেখানেও তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “বাবা বলেছিলেন, ভারতে যাচ্ছেন এবং দুয়েকদিনের মধ্যে ফিরে আসবেন।”

সংসদ সদস্য আনারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফও রবিবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গত ১২ মে দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান আনার। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।

বুধবার দুপুরে ডিবি অফিসে যাওয়ার পর বিকালে শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে তার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন ডরিন।

থানার ওসি মু. আহাদ আলী সকাল সন্ধ্যাকে মামলা দায়েরের খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্তের উদ্যোগ নিচ্ছে।

মামলার এজাহারে ডরিন লিখেছেন, মানিক মিয়া এভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের ফ্ল্যাট থেকে ৯ মে রাতে তার বাবা বেরিয়েছিলেন ঝিনাইদহের উদ্দেশে।

“গত ১১/০৫/২০২৪ বিকাল অনুমান ৪টা৪৫ মিনিটের দিকে আমার বাবার সাথে মোবাইল নম্বরে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাই।”

এরপর তার বাবার ভারতীয় সিম থেকে তার ‘উজির মামা’র নম্বরে একটি হোয়াটসআপ মেসেজ এসেছিল বলে জানান ডরিন। সেই মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লী যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমি অমিত সাহার কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।”

এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ এসেছিল উল্লেখ করে এজাহারে ডরিন লিখেছেন, “মেসেজগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।”

এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বরাগনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ডরিন।

তিনি বলেন, “আমরা আমার বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে আমার বাবাকে অপহরণ করেছে।”

থানায় মামলা করতে দেরির কারণ দেখিয়ে এজাহারে বলা হয়, “আমার বাবাকে সম্ভব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করিয়া কোথাও না পেয়ে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে সামান্য বিলম্ব হলো।”

দণ্ডবিধির ৩৬৪ ধারায় করা এই মামলায় ঘটনার সময়কাল দেওয়া হয়েছে, “৯ মে, ২০২৪, রাত অনুমান ২০.০০ ঘটিকা হইতে ১৩ মে, ২০২৪, এর মধ্যে যে কোনও সময়।”

বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইনের শিক্ষার্থী ডরিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী ছিলেন বলে তার ফেইসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ করেছেন। তার বাবা ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি।

বাবার খোঁজে ডরিন এরই মধ্যে ভারত ঘুরে এসেছেন বলেও দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

মামলা করার আগে ডিবি অফিসে ডরিন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, তার বাবাকে কারা হত্যা করতে পারে, সেই সম্পর্কে কোনও ধারণা তার নেই।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এমপি আনার কলকাতায় খুন হলেও খুনিরা বাংলাদেশি বলেই তারা জানতে পেরেছেন।

এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটকের খবরও সকালে করা সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

ওই তিনজনের বিষয়ে কিছু জানেন না কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ডরিন বলেছিলেন, তিনি কাউকে চেনেন না।

এই সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানায় গত ১৮ মে যিনি জিডি করেছেন, সেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস নিজেকে এমপি আনারের পারিবারিক বন্ধু বলে পরিচয় দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, গত ১২ মে সন্ধ্যায় বরাহনগরের সিঁথিতে তার বাড়িতে উঠেছিলেন আনার। পরদিন দুপুরে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বেরিয়েছিলেন ভাড়া করা একটি গাড়িতে। তারপর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি।

তার দাবি, সেদিন বাড়িতে না ফিরে আনার হোয়াটস্অ্যাপে একটি মেসেজ পাঠিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছিলেন তাকে। তার দুদিন বাদে ১৫ মে সকালে আরেকটি মেসেজ পান, যাতে আনার জানান যে তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং তার সঙ্গে ‘ভিআইপিরা’ আছেন।

গোপাল বলেন, এর দুদিন পর ১৭ মে তাকে বাংলাদেশ থেকে ফোন করেন ডরিন। তিনি জানান যে বাবার সঙ্গে তারা কোনও যোগাযোগ করতে পারছেন না।

গোপাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আনারের সন্ধান না পেয়ে তিনি থানায় জিডি করেন।

সেই জিডির সূত্র ধরে পুলিশ আনারের ভাড়া করা গাড়িটির নম্বর ও চালকের সন্ধান বের করে। ওই চালকের কাছ থেকে জানা যায় যে আনার একজন বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে নিউ টাউন এলাকায় নেমে গিয়েছিলেন।

তার সূত্র ধরে নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে আনারের হত্যাকাণ্ডের আলামত পাওয়ার কথা জানায় কলকাতা পুলিশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত