ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার এক আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের ভাঙড়ের একটি খালে অভিযান চালিয়ে কিছু হাড় উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।
তবে উদ্ধার এসব হাড় বাংলাদেশি সংসদ সদস্য আনারের কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দারা। তারা বলছে, ফরেনসিক পরীক্ষার পর আনারের রক্তের সম্পর্কের কারও সঙ্গে এর ডিএনএ মিলিয়ে তবেই বলা যাবে হাড়গুলো তার কিনা।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনার গত ১৩ মে ভারতের কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বলে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে। গত ২২ মে তার খুনের খবর প্রকাশ পেলেও এখনও পাওয়া যায়নি লাশ বা দেহাবশেষ।
এর মধ্যে গত ২৮ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংসের টুকরা উদ্ধার করা হলেও সেগুলো আনারের দেহের অংশ কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে মাংসের টুকরাগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
অন্যদিকে আনার হত্যায় জড়িত অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারের দাবি, আনারের দেহের হাড় ও মাথার অংশ টুকরো টুকরো করে পশ্চিমবঙ্গের ভাঙড়ের পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে সেই খালে অভিযান চালানো হলেও কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানায় সিআইডি।
এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, আনার হত্যা মামলার আরেক আসামিকে নেপাল থেকে কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তার করেছে। অবশ্য নেপাল থেকে গ্রেপ্তার আসামির নাম জানাননি ডিএমপি কমিশনার। তবে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তার নাম সিয়াম।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সিয়ামকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিন পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এরপর সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার সকালেই তাকে নিয়ে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে অভিযানে যায় সিআইডির কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খালে তল্লাশির এক পর্যায়ে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে হাড়গুলো দেখে মনে হয়েছে সেগুলো মানুষেরই। তবে তা আনারের কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য করতে হবে ফরেনসিক পরীক্ষা।
পশ্চিবঙ্গের সিআইডি সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, গত ১৩ মে আনারকে হত্যার পরে নিউ টাউনের অভিজাত আবাসন থেকে তার দেহের অংশ ট্রলি সুটকেসে ভরে নিয়ে খালে ফেলে দেয় সিয়াম। এই কাজে তার সঙ্গে ছিল জিহাদ হাওলাদার। পরে গত ১৬ মে সিয়াম বিহার হয়ে নেপালে পালিয়ে যায়।
গত ২২ মে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আনারকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর ওইদিনই ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা করেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এর আগে এ ঘটনায় ঢাকায় আটক শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে। এদের মধ্যে শিলাস্তি ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।