মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় ছেড়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বিডিনিউজ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বুধবার দুপুর ২টার দিকে তারা শাহবাগ মোড়ে এসে রাস্তা আটকে দেন। বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা আবার শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি বলেন, শহীদ মিনারে গিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবি তুলেছেন।
এসব দাবি মেনে নিতে সরকারকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন তারা।
এ সময়ে মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনে দুপুর পৌনে ২টার দিকে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে আসতে শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শাহবাগ থানার সামনে ‘ব্যারিকেড’ দিয়ে অবস্থানে ছিল পুলিশ। শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘ব্যারিকেড’ ছুড়ে ফেলে দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এসময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত রবিবার থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
সেদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হলেও দুপুরে পুলিশের অনুরোধে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে, জলকামানের পানি ছিটিয়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সোমবার থেকে সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে তারা পদযাত্রা নিয়ে শহীদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে হাইকোর্টের মাজার ফটকের সামনে পুলিশ পদযাত্রা আটকে দেয়। রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর সরে গিয়ে বাকি রাত শহীদ মিনারে অবস্থান করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে সরকার দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে এরপর ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
জোটের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এনটিআরসিএ সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম-বিটিএফের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ্ রাজু বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যাবো না।”
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।
এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শাতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।



