আবার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মুশফিক ফজল আনসারী; অভিযোগ উঠেছে, সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি অন্য উদ্দেশ্য হাসিল করছেন।
মুশফিক ফজলকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে নিয়মিতই বাংলাদেশ বিষয়ে প্রশ্ন করতে দেখা যায়। তার সেই তৎপরতাকে সন্দেহের চোখে দেখেন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনরা। সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে তার প্রশ্ন ঘিরে নতুন করে উঠেছে প্রশ্ন।
গত ১৭ মে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন মুশফিক ফজল। সেখানে তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলকে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চাইছে হোয়াইট হাউজ ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরে তার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের এমন কথা জানিয়েছেন দাবি করে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন ফজল। তার উত্তরে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, এমন কোনও বিষয় নেই।
তবে ঢাকায় লুর সঙ্গে বৈঠকের পর সালমান রহমান ‘নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে’ এমন কোনও কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বৈঠকে তাদের আলোচনায় এসেছে। লু এক্ষেত্রে বলেছিলেন, বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে রয়েছে।
এভাবে খণ্ডিত বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রশ্ন করাকে সাংবাদিকতার রীতি-নীতির লঙ্ঘন বলে মনে করছেন দেশের সাংবাদিকরা।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, তার নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। শেখ হাসিনা তার বাবার খুনি রাশেদ চৌধুরীকে প্রত্যার্পণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলা হবে কি না, জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন আনসারী। এ থেকে স্পষ্ট যে, তার নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রেস ব্রিফিংয়ে যাওয়া অন্যায়ের কিছু না হলেও ‘প্রপাগান্ডার জন্য’ কর্মকর্তাদের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করাকে অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদ।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুশফিক ফজল খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার (২০০১ থেকে ২০০৬) সময় তার উপ প্রেসসচিব ছিলেন। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটিরও সদস্য সচিব ছিলেন।
তখন তাকে খালেদার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর ভাগ্নে হিসেবে চিনত সবাই। হারিস ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
মুশফিক ফজল নিজেকে জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক, সংবাদমাধ্যমটির হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি, জাতিসংঘ প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন।
এর আগেও পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক ফজলের বিভান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রশ্ন করার নজির রয়েছে।
‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয় প্রকাশ পেয়েছে’- একবার প্রশ্ন করতে গিয়ে এমন তথ্য দিয়েছিলেন তিনি কোনও প্রমাণ ছাড়াই।
পররাষ্ট্র দপ্তরের আরেক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকে ‘সরকারপন্থি’ হিসেবেও তুলে ধরেছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, মুশফিক ফজল সাংবাদিকতার আড়ালে তার রাজনৈতিক ‘এজেন্ডা বাস্তবায়নের তৎপরতা’ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুশফিক ফজলের তৎপরতা নিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান বলেন, “এ ধরনের প্রচারণাকে সাংবাদিকতার কাজ হিসেবে গণ্য করা উচিৎ নয়। কেবল কর্মীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন প্রচারণা চালাতে পারে। এ ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতা একটি ভালো হাতিয়ার।”