Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মিউজিক স্ট্রিমিং সাইট কি জনপ্রিয় হচ্ছে দেশে

music-removebg-preview
Picture of সৈয়দ ফরহাদ

সৈয়দ ফরহাদ

গান শোনার মাধ্যম হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। অন্যান্য দেশে রেডিওর চল একেবারে উঠে না গেলেও, বাংলাদেশের ২০টিরও বেশি চালু থাকা এফএম রেডিও এখন বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।   

পছন্দ অনুযায়ী, রূচি অনুযায়ী গান বেছে শোনার সুযোগ থাকায় মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মই শ্রোতাদের ভরসার জায়গায় এখন এক নম্বরে। এমনকি শ্রোতার গান শোনার ঝোঁক বুঝে সেট লিস্টও তৈরি করে দেয় প্ল্যাটফর্মগুলো। 

মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কথা এলেই শুরুতে বলতে হয় ইউটিউবের কথা। ইউটিউব মূলত ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হলেও গান শোনার মাধ্যম হিসেবে দেশের শিল্পী এবং শ্রোতাদের কাছে অনেকদিন ধরেই এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউবের বৈচিত্র্যময় চরিত্রের কারণে শিল্পী এবং শ্রোতা, এই দুই শ্রেণিই এটাকে মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। তবে বিশুদ্ধ মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বাজারে আছে স্পটিফাই এবং অ্যাপল মিউজিক। 

জনপ্রিয়তায় ধীরে ধীরে সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে স্পটিফাই। অ্যাপল মিউজিক অবশ্য বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যাত্রা শুরু করেনি। ফলে বাংলাদেশ থেকে এর সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ব্যবহার ছাড়া গতি নেই।

সব মিলিয়ে আমাদের দেশে মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের বাজারটি আসলে কেমন তার খোঁজ নিতেই মিলে গেল গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের বাজার বুঝতে হলে আমাদের তাকাতে হবে এর ভোক্তাদের বা শ্রোতাদের দিকে। বিশেষত এর সাবস্ক্রাইবারের দিকে। 

ইউটিউব

২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ৩ কোটির বেশি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। 

শিল্পী থেকে শুরু করে রেকর্ড কোম্পানি এবং ডিস্ট্রিবিউটর, সবগুলো পক্ষকে ইউটিউব এক সুতোয় গেঁথেছে । ফলে ইউটিউব নিজেই গানের এক বিশাল সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে। 

ইউটিউব মূলত ভিডিও নির্ভর একটি প্ল্যাটফর্ম। গান শোনার প্রবণতা লক্ষ্য রেখে এই প্ল্যাটফর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাছাকাছি জনরার গান শ্রোতাকে রিকমেন্ড করে থাকে। 

নির্দিষ্ট জনরার গান শোনার ক্ষেত্রে ইউটিউবের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ইউটিউব আমাদের তাই শোনাতে পারে, যা ইউটিউবে ‘কনটেন্ট’ হিসেবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপলোড করে থাকে। 

কিন্তু শিল্পীরা কী পাচ্ছে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে? 

ইউটিউব থেকে শিল্পীদের আছে উপার্জনের সুযোগ। এক বছরে একজন শিল্পীর ইউটিউব চ্যানেলে ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ৪ হাজার ওয়াচ আওয়ার হলে চ্যানেলটি মনিটাইজেশন করা হয় এবং চ্যানেলটি অর্থ প্রাপ্তির আওতায় আসে। ফলে কন্টেন্টে প্রচারিত বিজ্ঞাপন থেকে শিল্পীরা টাকা পান। প্রতি ১ হাজার ভিউতে ইউটিউব শিল্পীদের এক থেকে দুই ডলার দিয়ে থাকে। তবে দেশভেদে এই সম্মানী আবার ভিন্ন ভিন্ন হয়। 

স্পটিফাই

দুইবছর আগে স্পটিফাই বাংলাদেশে তার যাত্রা শুরু করে। দুইবছরেই এই মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ১০ লাখ শ্রোতা গান শোনার জন্য নিয়মিত ঢুকছেন। এ প্ল্যাটফর্মটির আছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ বিষয়ভিত্তিক মিউজিক লাইব্রেরি। ফলে শ্রোতারা পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের গান সহজেই শুনতে পারেন। স্পটিফাই একটি অডিও মিউজিক প্ল্যাটফর্ম। কাজেই এই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সাউন্ড কোয়ালিটি ইউটিউবের চেয়ে বেশ এগিয়ে। 

স্পটিফাইও শিল্পীদের রুজি-রোজগারের সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রতি স্ট্রিমে এই প্ল্যাটফর্ম শিল্পীদের ৩ থেকে ৫ সেন্ট দেয়। অবশ্য এই অর্থপ্রাপ্তি নির্ভর করছে দুইটি বিষয়ের উপর। একটি হলো গানটি কোন অঞ্চল থেকে প্লে করা হচ্ছে এবং আরেকটি হলো কোন ধরনের সাবস্ক্রাইবার সেটি প্লে করছেন।   

বর্তমানে সংগীত অনুরাগী এবং শিল্পীদের কাছে স্পটিফাইয়ের আবেদন দিন দিন বাড়ছে। এ ব্যাপারে মিউজিক ডিস্ট্রিবিউটার কোম্পানি মাশরুম এন্টারটেইনমেন্ট (এমই লেবেল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ অপারেটিং অফিসার মো. ইফতেখারুল ইসলাম রুমন বলেন, “সারাবিশ্বে স্পটিফাইয়ের আছে ৫০০ মিলিয়নের বেশি ইউজার। বাংলা ভাষার প্রায় সব ধরনের গান এতে পাওয়া যায় বলে বাংলাভাষী শ্রোতারাও ধীরে ধীরে এই প্ল্যাটফর্মেই ঝুঁকছে। তাছাড়া শিল্পীরাও এখান থেকে রেভিনিউ পাচ্ছেন।”

শিল্পীদের স্বার্থের দিকটি তুলে ধরে রুমন আরও জানান “দেখুন, বাংলাদেশে বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতারা সারাবিশ্বের শ্রোতা। ভালো গান এরা চেনেন। পাশাপাশ স্পটিফাইয়ের রিজিওনাল প্রমোশন এবং অ্যালগরিদম নীতির কারণেও এ দেশের শিল্পীরাও চাচ্ছেন স্পটিফাইয়ে তাদের গান থাকুক। না থাকলে বরং তাদের লোকসান।”

জিপি মিউজিক

স্পটিফাই ছাড়াও বাংলাদেশে আছে গ্রামীণ ফোনের জিপি মিউজিক প্ল্যাটফর্ম। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরুর পর এই প্ল্যাটফর্মটি ৫ দিনেই পেয়ে যায় ১ লাখ ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার। বর্তমানে এর আছে প্রায় ১০ লাখ সাবস্ক্রাইবার। 

২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশি মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘গান’। তাদের আছে ১০ হাজারেরও কিছু বেশি সাবস্ক্রাইবার।

বাংলাদেশে মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের বাজার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ সারাবিশ্ব তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশেও দ্রুত বাড়ছে ‘ইন্ডিডেন্ডেন্ট আর্টিস্ট’দের সংখ্যা। 

এই শিল্পীরা নিজেদের গান রেকর্ড করার জন্য কোন রেকর্ড লেবেলের কাছে ধরনা না দিয়ে নিজেরাই গান রেকর্ড করে থাকেন। আর সেইসব গান প্রকাশের জন্য বেছে নেন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মকেই। রেকর্ড কোম্পানির দ্বারস্থ না হয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের গান প্রকাশ করতে চাওয়া এই শিল্পীরাই হলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্ট। 

এ ব্যাপারে কথা হয়, জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’ এর লিড গিটারিস্ট এবং রেকর্ড লেবেল জি-সিরিজের সিইও খাদেমুল জাহানের সাথে। 

জাহান বলেন, “পৃথিবীতে সবসময়ই দুইটা ধারা ছিলো। একটা হলো ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্ট এবং আরেকটি লেবেল আর্টিস্ট। ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্টিস্টরা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মকেই বর্তমানে বেছে নিয়েছেন। প্রচুর শখের শিল্পীদের জায়গাও এই প্ল্যাটফর্ম। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নতুন শিল্পীদের জন্য যদিও একটু চ্যালেঞ্জিং।”

তবে মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ছাড়া গান শোনার অন্য কোন বিকল্প যে এখন নেই এ-কথাও স্বীকার করে নেন জি-সিরিজের সিইও খাদেমুল জাহান।

কাজেই বাংলাদেশেও মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের বাজার শনৈ শনৈ কেবল বেড়েই চলবে এ কথা গবেষণা ছাড়াই অনুমান করা যায়।  

অবশ্য গবেষণাতেও মিলেছে এমন কিছুরই পূর্বাভাস।             

স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে মিউজিক স্ট্রিমিং খাতের আয় গিয়ে দাঁড়াবে ৪৬ কোটি ইউএস ডলারে। আর ২০২৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৯০ লাখে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত